সাবেক বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সর্বজ্যেষ্ঠ আইনজীবী তোফাজ্জেল হোসেন (টি এইচ) খান
সাবেক বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সর্বজ্যেষ্ঠ আইনজীবী তোফাজ্জেল হোসেন (টি এইচ) খান

সুপ্রিম কোর্টের সর্বজ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান আর নেই

সাবেক বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সর্বজ্যেষ্ঠ আইনজীবী তোফাজ্জেল হোসেন (টি এইচ) খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আজ রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে বর্ষীয়ান এই আইনজ্ঞ শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সিনিয়র এই আইনজীবীর মৃত্যুর সংবাদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

জ্যেষ্ঠতম এই আইনজীবী ও সাবেক এই বিচারপতির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সমিতির সম্পাদক বলেন, উনার মৃত্যুতে আইনঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ব্যারিস্টার কাজল আরও জানান, আগামীকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তাঁর নামজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান বিচারপতির শোক

সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম এই আইনজীবীর মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় প্রধান বিচারপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সেই সাথে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টে মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

টি এইচ খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

তোফাজ্জেল হোসেন খান যিনি টি এইচ খান নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) -এর ভাইস চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন। সেই বার তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে টি এইচ খান জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিভাগে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

কর্মজীবন

প্রথম জীবনে টি এইচ খান শিক্ষকতায় জড়িত ছিলেন। তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগদেন। ১৪ মার্চ ১৯৫১ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালের মার্চে তিনি বিচারপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে যোগদান করেন।

বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের পূর্বে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেলের (অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকার পক্ষের কৌসুলি ছিলেন।

তিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের জুলাই থেকে পুনরায় আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ম বার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২য় বার সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি সুইজারল্যান্ডে হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার ও পরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসঙ্ঘে নিয়োগ পান। ১৯৯৫ সালে তিনি সাউথ এশিয়া জোনে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক আদালতে এশিয়া মহাদেশে তিনিই একমাত্র বিচারপতি।

জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে ১৯ জুন ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিচার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের পর দেশে ফিরে আবারো আইন পেশায় যোগ দেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৫ নভেম্বর ১৯৮১ সালে আইন ও বিচার, তথ্য ও বেতার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন,ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের সামরিক আইন জারি হলে আবারও আইন পেশায় ফিরে যান তিনি। এরশাদের বিরোধিতা করায় ১৯৮৬ সালে গ্রেফতার হন তিনি।

১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পারিবারিক জীবন

টি এইচ খানের স্ত্রী বেগম রওশন আরা জোবায়দা খানম যিনি ৭৯ বছর বয়সে ১৭ মে ২০১১ সালে মারা যান। তাদের তিন ছেলে সন্তান আফজাল এইচ খান, ফজলে এলাহী খান এবং ফায়সাল এইচ খান। বড় ছেলে আফজাল এইচ খান (সাংবাদিক ও ময়মনসিংহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।) আর ফয়সাল এইচ খান আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন। মেজো ছেলে ফজলে এলাহী খান চাকরি করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। একমাত্র মেয়ে ডা. মাহমুদা ফাতেমা খান ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক।