দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিচালিত না হলেও ‘সময়মতোই কোর্টের কার্যক্রম পরিচালিত হবে’ বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বিভাগের বেঞ্চে তিনি এ কথা জানান।
এদিন সকাল ঠিক ৯টায় ভার্চুয়াল আপিল বিভাগে একজন আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড আগে তো ভার্চুয়াল কোর্ট সাড়ে নয়টায় বসত। এখন থেকে কি ৯টায় বসবে?’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হ্যাঁ কোর্ট ঠিক সময়মতোই চলবে। আর হাইকোর্ট সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে সোয়া একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত ব্রেক দিয়ে সোয়া চারটা পর্যন্তই চলবে।’
পরে আজকের কার্যতালিকা অনুযায়ী দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে আপিল বেঞ্চে বিচারকাজ শুরু করার সময় প্রধান বিচারপতি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারো ভার্চুয়াল কোর্টে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, চারিদিকে করোনা সংক্রমণের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে আবার ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালনায় যেতে হবে।
হাইকোর্ট বিভাগে কয়েকজন এবং অধস্তন আদালতেও কিছু বিচারক আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক স্টাফও আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা হয়তো আবার ভার্চুয়াল কোর্টে ফিরে যাবো। ভার্চুয়াল কোর্টে যে মামলা নিষ্পত্তি কম হয়, তা নয়। আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি ভাবছি।’
এরপর আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে পৃথক স্মারক জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। সপ্তাহে চার দিন শুধু তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে চেম্বার আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ভার্চুয়াল কোর্টের প্রেক্ষাপট
২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ- ২০২০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর দুই দিন পর ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে সশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ।
এরপর ওই বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। পরদিন ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালতের বাস্তবায়ন হয়।
প্রথমে দেশের অধস্তন আদালত, এরপর হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ও আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
দেড় বছর ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচার কাজ চলার পর গত ১ ডিসেম্বর থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। আর গত সেপ্টেম্বর থেকে একে একে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারক কার্যক্রমে ফেরে সবগুলো হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এর মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাব ফের বেড়ে যাওয়ায় আবারো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। তবে অধস্তন আদালতসমূহে এখনো প্রচলিত পদ্ধতিতেই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।