পাবনায় বহিরাগতদের হামলায় তিন আইনজীবী লাঞ্ছিত হয়েছেন। আইনজীবী লাঞ্ছিতের ঘটনায় জেলায় আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যৌতুক মামলার অভিযোগকারী ও আসামিপক্ষের বিরোধের জেরে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু জানান, পাবনা আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম দুলাল তার মক্কেল মো. কামরুজ্জামান, মক্কেলের জামাই মামলার সাক্ষী মো. মাসুদুজ্জামানকে নিয়ে বুধবার সকালে আদালতে আসেন। তারা কামরুজ্জামানের স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় চার্জ গঠনের শুনানিতে অংশ নিতে এসেছিলেন। তারা পাবনা বার সমিতির কাছে একটি হোটেলে খাচ্ছিলেন তখন একদল বহিরাগত যুবক তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় কামরুজ্জামান পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও বহিরাগত যুবকেরা তার জামাই মাসুদুজ্জামানকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে শহরের তাড়াশ ভবনে ও পরে এলএমবি মার্কেটের একটি কক্ষে আটকে রাখে।
অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী জানান, এরপর বহিরাগতরা আবারো আদালত প্রাঙ্গণে এসে মামলা ইস্যুতে কামরুজ্জামান ও আইনজীবীদের সাথে তর্ক শুরু করে। এসময় আইনজীবীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পাবনা পৌরসভা চত্বরে আইনজীবী রিজভী শাওন, আশরাফুজ্জামান প্রিন্স ও প্লাবনকে মারপিট করতে শুরু করে। একপর্যায়ে আইনজীবীরা পৌরসভা ভবনে দৌড়ে আশ্রয় নিলে বহিরাগত যুবকেরা সেখানেও তাদের মারপিট করে।
আহত আইনজীবী রিজভী শাওন বলেন, সিনিয়র আইনজীবী খায়রুল আলমের মামলার সাক্ষী অপহরণ হওয়ায় আমরা তার কাছে ঘটনা শুনছিলাম। এসময় জনি ও রাশেদ নামের দুই যুবকের নেতৃত্বে বহিরাগতরা আমাদের মারপিট শুরু করে। তারা সাক্ষী মাসুদুজ্জামানকে অপহরণ করে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। পরে, ঘণ্টা দুয়েক পরে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। আদালত চত্বরে এমন হামলার শিকার হবো তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
পাবনা আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা চত্বরে ও মেয়রের কক্ষের সামনেই হামলা ও মারপিট করা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং, হামলার খবর পেয়ে সহকর্মী আইনজীবীরা পৌরসভা কার্যালয়ে আমাদের উদ্ধারের জন্য গেলেও তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় পৌরসভার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়।
পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান বলেন, আইনজীবীদের কয়েকজন পৌর চত্বরে ঢুকলে তাদের পিছু নেওয়া কয়েকজন সেখানে এসে তাদের মারপিট করেছে বলে শুনেছি। বহিরাগতরা মারপিটের পর জন্ম নিবন্ধনের সেবা প্রার্থীদের ভিড়ে মিশে যায়। পরে আইনজীবীরা দলবেঁধে পৌরভবনে আসলে নিরাপত্তার স্বার্থে ফটক বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে, এ ঘটনায় কারা হামলাকারী আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি।
অ্যাডভোকেট আবদুল আহাদ বাবু বলেন, বহিরাগতরা আইনজীবীদের ওপর হামলা ও আইনজীবীদের লাঞ্ছিত করা খুবই দুঃখজনক। আইনজীবীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় আইনজীবী সমিতি পদক্ষেপ নেবে। মামলা দায়েরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জুয়েল বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই কিন্তু পৌরসভা অফিস চত্বরে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।