ভুক্তভোগীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বললেন সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

হত্যা মামলায় এজাহার বদল: তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

রাজশাহীতে এক হত্যা মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই হত্যার ঘটনা তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত পিবিআই -এর তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, আপনারা (তদন্ত কর্মকর্তা) যা ইচ্ছা তাই করবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের বেঞ্চ রোববার (৩০ জানুয়ারি) এ মন্তব্য করেন।

এর আগে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক শামীম আক্তারকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিতে রোববার আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। ব্যাখ্যায় শামীম আক্তার বলেন, মামলার বাদীর কাছে প্রথমে এজাহার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি তা দেননি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

কিন্তু তার এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি হাইকোর্ট। আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে পুনরায় লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেননি আদালত।

শুনানিতে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যা ইচ্ছে তাই করবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনাকে বলা হয়েছিল হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত শেষ করতে। কিন্তু সেটিও করেননি।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তার (আইওর) পক্ষে মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

প্রেক্ষাপট

২০১৯ সালের ১০ জুনে নিখোঁজ হন পুঠিয়ার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নির্বাচনের ফলকে কেন্দ্র করে তিনি হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু সেই এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে ওই থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ ছিঁড়ে ফেলেন। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেরাই একটা এজাহার লিখেন বলে অভিযোগ ওঠে।

প্রতিকার চেয়ে রিট

এ ঘটনায় মামলার বাদী হাইকোর্টে প্রতিকার চেয়ে রিট করেন। রিটে এ ঘটনা তদন্তে বিচারিক অনুসন্ধান চাওয়া হয়।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সে আদেশ অনুসারে পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব

এরপর ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা মামলার আসামি আবুল কালাম আবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি বিচারিক আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।

মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবুর জামিন শুনানিতে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) তলব করেন।

আদেশে মামলার কেস ডকেট নিয়ে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

এ প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিলে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুনরায় ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়।