ভুয়া নিয়োগপত্র: রিট করে ফাঁসলেন ৩৪ আবেদনকারী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

বায়ুদূষণ: পাঁচ ডিসিসহ ৬ জনকে তলব

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ জানাতে ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলার প্রশাসক (ডিসি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওই পাঁচ জেলা হচ্ছে- ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ। এসব জেলার ডিসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে ব্যক্তিগতভাবে জুম আইডির মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখিত জেলাগুলোর অবৈধ ইটভাটার তালিকা দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাইদ আহেমেদ এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান শুনানি করেন।

শুনানিকালে মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘বায়ু দূষণ নিয়ে হাইকোর্টের কয়েকদফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মিডিয়ায় রিপোর্টে এসেছে— অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের সামনে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময় করে মালিকরা অবৈধভাবে সাভার, ধামরাইয়ে ইটভাটা চালাচ্ছেন।’

আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করে তিনি বলেন, ‘এই রিট মামলায় ৮ বার আদালত বিভিন্নভাবে নির্দেশনাগুলো দেওয়ার পরেও বিবাদীরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।’

এসময় আদালত বলেন, ‘অনেকবার আদেশ দিলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আদালত বসে থাকতে পারে না।’

এরপর আদালত মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। এরপর ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কয়েকদফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাগুলো নিম্নরূপ

১. ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা।
২.নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা।
৩. সিটি করপোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো।
৪. রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোড়াখুড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা।
৫. কালো ধোয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা।
৬. সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা
৭. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা
৮ পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং
৯. মার্কেট/দোকানসমূহের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নেয়া।

করোনাভাইরাসে বায়ু দূষণ মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে পারে, গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন দেখে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর এইচআরপিবির পক্ষ থেকে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদনের শুনানির পরই একই বছরের ২৪ নভেম্বর আদালত ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জানতে চায়। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে তা জানাতে বলা হয়। তার ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানে ফের ৫ দফা নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি। যার শুনানির পর নতুন করে আরও তিনটি নির্দেশনা দেয় আদালত।

ওই তিন নির্দেশনায় রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে ঢাকার রাস্তায় ওপর থেকে পানি ছিটাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যাতে রাস্তার পাশের ছোটখাটো গাছে জমে থাকা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার হয়। এছাড়া পানির ঘাটতি তৈরি হলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশকে পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তবে সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়। ওই আবেদনের সঙ্গে ঢাকা শহরের বর্তমান দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান ও অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা সম্পর্কে মিডিয়ার সংবাদ সংযুক্ত করে আরও ৪ দফা নির্দেশনা চাওয়া হয়।