সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার দায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এসআই লিয়াকত আলীকেও ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পরই আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার পরবর্তী ধাপে হাইকোর্টে নথি আসবে ডেথ রেফারেন্স আকারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হয়। উচ্চ আদালত থেকে সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশকে নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের মামলার রায়, তদন্ত প্রতিবেদন, এজাহারসহ সব নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠানো হয়ে থাকে। জানা গেছে, রায়দানকারী বিচারক কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দ্রুত এই ডেথ রেফারেন্স নথি হাইকোর্টে প্রেরণ করবেন।
এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা এসব নথি যাচাই-বাছাই করবে। মামলার সব নথি ক্রমানুসারে সাজিয়ে পেপারবুকের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে এই পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে পেপারবুক প্রস্তুত হলেও ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি হবে সালের ক্রম অনুযায়ী। উচ্চ আদালতে মামলাজটের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।
বর্তমানে হাইকোর্টে ২০১৫/২০১৬ সালে অধস্তন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে। সেই হিসাবে সালের ক্রম অনুযায়ী মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিচারপ্রার্থীদের। সে পর্যন্ত তাদের কারাগারের কনডেম সেলে কাটাতে হবে।
তবে এর আগেও শুনানি করা সম্ভব, যদি রাষ্ট্র বা সুপ্রিম কোর্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বা বিজি প্রেস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে থাকে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই অধস্তন আদালতের রায় ঘোষণার দুই বছরের মধ্যেই ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি সম্ভব বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
কনডেম সেল
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরকে কারাগারের অন্যান্য কয়েদীদের থেকে আলাদা এক কক্ষে রাখা হয়। এই কক্ষটিকে কনডেম সেল বলা হয়। কনডেম সেলের আসামিদেরকে রাখা হয় অনেক সতর্কতার ভিতরে। কনডেম সেলের একজন বন্দির ওপর কারাগারে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা, দর্শনার্থীদের সাথে দেখা করার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।
একজন বন্দির থাকার জন্য ন্যুনতম ৩৬ বর্গফুট (৬ফিট বাই ৬ ফিট) জায়গা বরাদ্দ থাকে। এই কনডেম সেলে একজন বন্দি কোনোরকমে থাকতে পারেন। এই ছোট্ট কক্ষটা হয়ে যায় বন্দির পরবর্তী দুনিয়া। এই কক্ষের ভিতরেই খাওয়া ও টয়লেটের কাজ করতে হয় একজন বন্দিকে।
কনডেম সেলের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য সাধারণত অন্যান্য সেলের তুলনায় অনেক ছোট আকারের জানালা থাকে। আর এসব সেলে থাকা বন্দিদের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেলের বাইরে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। তবে সেই সময়টাও খুবই সীমিত। এই সেলের বাসিন্দারা বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে মাসে একবার আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
কোনো আসামির অপরাধ যদি পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে খারিজ হয় তাহলে সে কেবলমাত্র তখনই এই কনডেম সেলের বাইরে আসতে পারবে। আর যদি উচ্চ আদালতে ফাঁসির রায় বহালই থাকে তাহলে আসামি বা বন্দিকে এই কনডেম সেল থেকে সরাসরি ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়।