বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের আপিল বোর্ডের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান।
আজ সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জায়েদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী আবেদনটি দায়ের করেন।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে জায়েদ খানকে অপসারণের সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচনের আপিল বোর্ড। একই সঙ্গে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় এফডিসিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান।
জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে সোহানুর রহমান সোহান জানান, নির্বাচনি বিধি অমান্যের অভিযোগে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। দু’জন ভোটার লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, সাধারণ পদপ্রার্থী জায়েদ খান এবং সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নু ভোট দেওয়ার জন্য তাদের নগদ অর্থ দিয়েছেন।
আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এ ছাড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী মৌখিকভাবে তাদের অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং ভিডিও ফুটেজে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি সত্য।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নির্বাচন ২০২২-২৪ এর প্রণীত তফসিলের ১০ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে পারবে।
আপিল বোর্ডের প্রধান বলেন, এ বিষয়ে প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে অভিযোগ করেন। আমরা বিষয়টি সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দিকনির্দেশনা চেয়ে আপিল বোর্ড চিঠি দেয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় জায়েদ খান ও চুন্নুর সদস্যপদ বাতিল করা হয় বলে জানান সোহানুর রহমান সোহান।
এদিকে বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণের নাম ঘোষণা ও প্রার্থিতা বাতিলকে আইনবহির্ভূত রায় হিসেবে উল্লেখ করেন জায়েদ খান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে তিনি বলেন, এখানে আপিল বোর্ডের কোনো মূল্য নেই। তারা এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এটি আইনবহির্ভূত, পৃথিবীতে এমন নজিরবিহীন ঘটনা নেই। প্রজ্ঞাপনের পর আপিল বোর্ড কীভাবে এ রায় ঘোষণা করে? আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।
নির্বাচনে বিজয়ী যারা
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে জয় পেয়েছিলেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। সাধারণ সম্পাদকের পদে ১৩ ভোটের ব্যবধানে জায়েদ খান জয় পেলেও অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনায় শনিবার সন্ধ্যায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে আপিল বোর্ড। আর তাতে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। এ ছাড়া এদিন চুন্নুর স্থলে নাদির খানকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য ঘোষণা করা হয়।
অন্যান্য পদে বিজয়ীরা হলেন, সহসভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহনূর। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মামনুন ইমন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে জয় চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ পদে আজাদ খান।
এ ছাড়া কার্যকরী পরিষদের নতুন ১১ সদস্য; যথাক্রমে অঞ্জনা সুলতানা, অরুণা বিশ্বাস, অমিত হাসান, আলীরাজ, কেয়া, নাদির খান, জেসমিন, ফেরদৌস, মৌসুমী, রোজিনা ও সুচরিতা বিজয়ী হন।
বিজয়ীদের শপথ গ্রহণ
গতকাল রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটি শপথ নিয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে শপথ পড়ান বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর। এরপর নিয়মানুযায়ী নিপুণসহ অন্যদের শপথ পড়ান ইলিয়াস কাঞ্চন।
ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে বিজয়ীরা শপথ নিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও মিশা-জায়েদ খান প্যানেল থেকে নির্বাচিত কোনো সদস্য ছিলেন না। জায়েদ খানও ছিলেন না শপথ অনুষ্ঠানে।