দেশের হাসপাতালসমূহে নার্স বদলি সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত, বদলি বাণিজ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি (লিগ্যাল) পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ইমেইল ও ডাকযোগে মানবাধিকার সংগঠন ল’ এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের এ নোটিশ পাঠান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মোঃ জামাল উদ্দিনকে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
নোটিশে দেশের নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া নার্সদের বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাশপাশি বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে অবৈধ সিন্ডিকেটের সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উক্ত কমিটি কর্তৃক তদন্ত করে ঘুষ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের নিকট থেকে টাকা আদায় করে ভুক্তভোগী নার্সকে ফেরত প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বদলি বাণিজ্যের হোতা মোঃ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে নোটিশ গ্রহীতাগণ কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে নোটিশ প্রেরণকারীকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নার্সদের বদলি বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকুরীর একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতংকের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন। গত বছরের সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর তিন মাসে প্রায় চার হাজার নার্স কে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশের নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। এই নার্স বদলি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা মো. জামাল উদ্দিন নামের কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তি। যিনি উক্ত অধিদপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট। অধিদপ্তরে সবকিছুই যেন তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। বদলি বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জেলা থেকে তার এবং তার আত্মীয় স্বজনের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। এ বদলি বাণিজ্যকে পুঁজি করে পঞ্চম শ্রেণি পাস একজন ভবঘুরে জামাল উদ্দিনের এখন কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, রয়েছে আলিশান বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ। স্ত্রীর নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। সব মিলিয়ে এ যেন নার্স পেশাকে ধ্বংসের এক পাঁয়তারা। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের বিষয় নার্সগন চাকুরীর ভয়ে কোন ধরনের অভিযোগ তোলার সাহস পায় না।
নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব জানান, বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে নার্স পেশা পড়ছে হুমকির মুখে। হাজার হাজার নার্সের নিকট থেকে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করে নার্সদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
নোটিশ প্রেরণকারী এ আইনজীবী বলেন, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নার্সদের পেশার স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার।
বদলির জন্য নার্সদের টাকা প্রদানে বাধ্য করা এবং তাদের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণ করা নার্সদের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। কাজেই যেসব নার্স বদলির জন্য টাকা প্রদান করেছেন উক্ত টাকা ফেরত পাওয়া তাদের আইন সম্মত অধিকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।