ভালো আইনজীবী হওয়ার শর্টকাট কোনো মেথড নেই উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, পড়ার কোনো বিকল্প নাই। পড়াশোনা ছাড়া ভালো ল’ইয়ার হওয়ার কোনো বিকল্প নাই। কোনো মেডিসিন নাই। কোনো শর্টকাট মেথড নাই। পড়তে হবে এবং পড়তে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে ১৫ দিনব্যাপী ‘বইমেলা-২০২২’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, পবিত্র কোরআনের নাযিল হওয়া প্রথম কথা ছিল ‘পড়’। কিছু জানতে গেলে পড়তে হবে। এপারেন্টলি মনে হয় আমরা অনেক পড়ে ফেলছি। আসলে কিছুই পড়িনি। যখন পড়তে থাকি তখন মনে হয় কত অজানা! পার্টিকুলারলি বিচার করার সময় দেখেছি কত কম পড়ে বিচারকের চেয়ারে বসেছি। এজন্য সবাইকে বলব আসেন আমরা পড়ি। পড়ার কোনো বিকল্প নাই। পড়াশোনা ছাড়া ভালো ল’ইয়ার হওয়ার কোনো বিকল্প নাই। কোনো মেডিসিন নাই। কোনো শর্টকাট মেথড নাই। পড়তে হবে এবং পড়তে হবে।
দেখা যায় একটি কেসে আপনি রেডি, কিন্তু অনেক দিন পর একই রকমের আরেকটি কেস বা আইন ঘাটতে ঘাটতে এমন ব্যাখ্যা পাবেন যা এর আগেও কল্পনাও করেননি। তখন মনে হবে আগের কেসে যদি এই সিদ্ধান্তগুলো দেখানো যেত তাহলে রেজাল্ট এমন হত না।
নিজের আইনজীবী জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি মামলায় বিচারপতি মাহমুদুর রহমানের সাহেবের (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন) কোর্টে শুনানিতে গেলাম। আমার অপজিট সাইডের ল’ইয়ার একটু দুর্বল ছিলেন। সে সময়ের আপিল বিভাগের একটি রায় ছিল আমার মামলার বিপক্ষে যায়। আমি আরগুমেন্ট করলাম, বিচারক কনভেন্সড হয়ে গেলেন। এরপর আমার প্রতিপক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওই রায় উপস্থাপন করতে পারলেন না। পরে মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারক সম্ভবত আপিল বিভাগের ওই রায় উনার নজরে আসেনি। কিন্তু আমি ওই রায়ের বিষয়টি বিচারককে অবগত করলাম। বিচারক বললেন, আপনি যে এ বিষয়টি উল্লেখ করলেন, রায় তো আপনার বিপক্ষে যাবে। আমি বললাম, এ রায় আমার বিবেকের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ গল্পটা এজন্য বললাম যে কেস আরগুমেন্ট করার সময় ১০০ ভাগ সৎ থাকবো। শুধু ক্লায়েন্টের দিকে তাকিয়ে কোর্টকে মিসলিড করে অর্ডার নেওয়া কোনোভাবেই নৈতিক না।
নৈতিকতার মাপকাঠি একেকজনের একেক রকম উল্লেখ করে তিনি বলেন, মক্কেলের দুর্বলতার সুযোগে বেশি অর্থ নেওয়া নৈতিকতার বিষয়। অনেক আইনজীবী আছেন যারা পয়সার লোভ করেন না। আমাদের পাল বাবু ছিলেন ২০ হাজার ১ টাকা ফি নিতেন। মাহমুদুল ইসলাম সাহেবও। একবার মাহমুদুল ইসলামকে সিনিয়র হিসেবে একটি মামলায় যুক্ত করি এবং ফিসও দিয়েছি। উনি আপিল বিভাগে যাওয়ার আগেই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেল। আমরা জিতে গেলাম। আমি কোর্ট থেকে বেরিয়ে দেখি স্যার আসতেছেন। আমি থামিয়ে বললাম মামলার শুনানি শেষ, আমরা জিতে গেলাম। তখন তিনি মক্কেলকে দেখা করতে বললেন। মক্কেল দেখা করার পর তিনি পুরো টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-মামলায় হাজির হতে পারেননি তাই ফেরত দিয়েছেন। এটা কিন্তু নৈতিকতা বা নীতির মাপকাঠি। এ রকম আইনজীবী ছিলেন। আপনাদের মধ্যে এ রকম অনেককে চিনি।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আইনজীবীদের নামের আগে বিজ্ঞ বলা হয়। আর কারো নামের আগে বিজ্ঞ বলা হয়না। বলা হয়না বিজ্ঞ প্রফেসর, বিজ্ঞ ডাক্তার, বিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আইনজীবীদের বিজ্ঞ বলা হয়। এ বিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে পড়তে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) পরিচালিত সমিতি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং আইনজীবী সমিতির কার্যকরী নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক আইনজীবী।