দীপজয় বড়ুয়া: দেশের জনগণ অনেক সহজ-সরল, প্রাণবন্ত। কিন্তু গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুষ্টিমেয় কর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করে থাকেন। মাঝমধ্যে সাধারণ মানুষ তাদের মাধ্যমে চরমভাবে নাজেহাল হয়ে থাকেন, যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন জনগণের প্রতি সরকারী কর্মচারীদের এ ধরণের আচরণ সমর্থন করে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২(২)-এ উল্লেখ আছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বলতে প্রথমে মন্ত্রী, আমলা, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা,বিচারক, আদালত ও অন্য কর্মচারীদের সহযোগী, পঞ্চায়েতের সদস্য, সালিশকারী, পদাধিকার বলে কোন ব্যক্তিকে আটক বা বন্দি রাখতে পারে এমন সকল ব্যক্তি, পৌর কমিশনার, সরকারি বেতনভুক্ত যেকোন কর্মচারী যিনি সরকারের পক্ষে যেকোন কার্য সম্পাদন করতে পারেন এমন ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (41 DLR AD 300)।
পুলিশ প্রবিধানমালা বেঙ্গল -১৯৪৩ (P.R.B-1943) এর প্রবিধান ৩৩-এ উল্লেখ আছে, জনগণের প্রতি রূঢ়তা, অভদ্রতা ও নিষ্ঠুরতা নিষিদ্ধ। তাদের প্রতি সহনশীলতা, ভদ্রতা ও সৌজন্যতা/সুজনতা প্রদর্শন করতে হবে। যদি তার ব্যতিক্রম হয় তাহলে প্রত্যেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫২ ধারায় উল্লেখ আছে যে, কোন স্ত্রীলোকের দেহ তল্লাশী করার প্রয়োজন হলে শালীনতার প্রতি দৃষ্টি রেখে অন্য স্ত্রীলোক দ্বারা তল্লাশী করাতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১০৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে, যদি কোন পুলিশ অফিসার বা কোন সাক্ষী যদি কোন স্থানে/গৃহে তল্লাশী চালাতে চায় তাহলে উক্ত স্থানে বা গৃহে প্রবেশের পূর্বে উক্ত গৃহের অধিপতিকে ঐ সাক্ষী বা পুলিশের দেহ তল্লাশী করতে দিতে হবে। ( Ref: 27 Cr. LJ 73, AIR 1930 Cal 143, 60 DLR 34- A. Ohab vs. State.)
এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কখনো কোনভাবে নিরীহ জনগণের সাথে কোন প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারী খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। শুধুমাত্র সহজাত সারল্যতা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কতিপয় কর্মচারী রাজার উপর কর্তৃত্ব খাটায়। তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। যা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন- ২০০৯ এর লঙ্ঘনও বটে। যা কখনো উচিত/কাম্য নয়।
লেখক: অ্যাডভোকেট; জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।