মো. নজরুল ইসলাম: গতকাল চট্টগ্রামে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ মহোদয়কে রাস্তায় গাড়ি দ্বারা আঘাত করার প্রতিবাদ করায় উল্টো স্ত্রীর সামনে তাঁকে রক্তাক্ত আঘাত করা হয়। লাঞ্চিত করা হয় মহোদয়ের স্ত্রীকেও।
এজলাসে বিচার করে অন্য সব জায়গায় চোখ বন্ধ করে রাখা অনেকসময় সম্ভব হয় না। চলতে ফিরতে বিচারকের সাথে কেউ না থাকুক, কিছু না থাকুক জজিয়তি মানসটিতো নিজের অজান্তে বয়ে বেড়ান তিনি। স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, “পরিচয় গোপন করে পৃথিবীর কোথাও যাওয়া সম্ভব না, পরচুলা আর কালো চশমা যথেষ্ট নয়; হুইল চেয়ারটি সব ফাঁস করে দেয়।” ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবেরও হয়তো এ হুইল চেয়ার রূপী মনটা এদিন বাঁধ সাধল। তাই প্রতি আঘাতে জর্জরিত হলেন।
রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বিচার বিভাগ যদি এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহলে বিচারকদের কাজ করা অত্যন্ত দুরূহই নয় তা রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনকও। কেননা শেষ আশ্রয়টি মানুষ যে বিচারকের কাছে চায় তিনি যদি আশ্রয়য়ের জন্য দৌড়াতে থাকেন তাহলে তা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য লজ্জার।
রাষ্ট্রের অন্য অনেক বিভাগই নিজেরা তাদের সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদি আদায় করে নিয়েছে। বিচারকরা তাতে মোটেও ঈর্ষান্বিত নয়। বিচারকরা অন্যকে দেয়া/প্রদেয় ন্যায্য সুবিধার বিরুদ্ধে নয়, তবে স্ট্রংলি বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বিচারকেরা সংখ্যায় কম এবং বলতে পারেও কম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তিকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে-
“কেউ যদি ন্যায্য কথা বলে আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।”
জজ সাহেবরা রক্ত মাংসেরই কেউ। তাদেরও চাওয়া-পাওয়া, ব্যাথা-বেদনা থাকতে পারে। তা যেন শোনা হয়। তাদের মূল্যায়ন করা হোক। তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক। নিরাপত্তাতো বটেই। কোন বিচারককে যেন অন্যকে দেয়া সীমাহীন সুবিধাদি দেখে জীবনানন্দ দাশের পংক্তিতে ডুব দিতে না হয়-
“জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য, সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজনবোধ করি নাঃ আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নীচে।”
লেখক: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ