প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধনসহ ভুক্তভোগী নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার বা চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সংক্রান্ত আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এই খসড়া প্রস্তুত করেছে বলে আদালতকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানিতে গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এমন তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। অন্যদিকে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শারমিন আকতার শিউলি।
ওই রিট আবেদন শুনানিতে গত ১৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সাক্ষ্য আইন সংশোধনসহ আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য খসড়া বিল আকারে তৈরি করা হয়েছে। সেদিন আদালত ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল বিষয়ে পদক্ষেপ রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। ১৪৬ (৩) ধারার বিষয়টিও আমলে নেওয়ার কথা বলেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য ছিল।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধনে যে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, তা দাখিল করা হয়েছে। খসড়ায় ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৪৬ (৩) ধারার বিষয়ে জেনে হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘তাহলে ১৫৫ (৪) ড্রপ (বাদ) হয়ে যাচ্ছে। ১৪৬ (৩) রয়ে গেছে। রিট আবেদনকারীদের কপি দেন।’
অন্যদিকে আইনজীবী শারমিন আকতারের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘১৫৫ (৪) ধারা ডিলিট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৪৬ (৩) ধারাটি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে এই খসড়ায় উল্লেখ নেই। খসড়াটি নিয়ে দেখেন। রোববার শুনানির জন্য রাখছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ রিট করে। এ তিন সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়, তখন সাধারণভাবে অভিযোগ দায়ের করা নারীকে দুশ্চরিত্রা দেখানোর সুযোগ থাকে। আর আইনের ১৪৬ (৩) ধারা অনুযায়ী, চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ এবং সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যায়। এজন্য এই দুটি ধারা অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা চেয়ে রিটটি করা হয়।