সারাদেশে প্রায় প্রতিদিনই বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, খোরপোশ, শিশুসন্তানের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান ইত্যাদি কারণে বিচারপ্রার্থীদের পারিবারিক আদালতে হাজির হতে হয়। বাড়িতে অন্য কারো কাছে রেখে আসা সম্ভবপর নয় কিংবা অন্যান্য নানা কারণে দুগ্ধপোষ্য, অবুঝ কিংবা নাবালক শিশুদের মায়ের সঙ্গে আদালতে দেখা যায় প্রায়শই। যেন বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বে বিনাদোষে আদালতে আসার ‘দণ্ডে’ দণ্ডিত তারা!
অপরিচিত পরিবেশ, লালসালু কাপড়, পুলিশ, কালো গাউন পরিহিত বিচারক-আইনজীবী সবকিছু দেখে শিশুরা ভয় পায়। আবার হাজিরার ডাক পরলে কান্নারত শিশুকে কোলে নিয়ে এজলাসে ছুটে আসেন মা।
শিশুদের ভয় কাটাতে, কান্নারত শিশুদের কান্না থামাতে এবং মামলার শুনানি ও মায়ের ঠিকঠাক সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান।
তিনি বেশকিছু চকলেট কিনে রেখেছেন শিশুদের জন্য। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলেই শিশুদের চকলেট উপহার দেন তিনি। তাঁর এই চমৎকার আইডিয়া একদম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। চকলেট পেয়ে শিশুদের সব ভয় কেটে যায়, থেমে যায় কান্না। আদালতের বিচারিক কার্যক্রমও চলে নির্বিঘ্নে।
এ বিষয়ে মো. মতিউর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে পারিবারিক মামলা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাচ্চা কোলে নিয়ে মায়েরা কোর্টে আসে প্রতিদিন। আদালতের ভেতর-বাহির হাজারো মানুষের ভিড়ে গিজগিজ করে। অপরিচিত পরিবেশ, লালসালু কাপড়, পুলিশ, কালো গাউন পরিহিত বিচারক- আইনজীবী সবকিছু দেখে ভয় পায় শিশুরা।’
তিনি বলেন, ‘মামলার ডাক পড়লেই কান্নারত শিশুকে কোলে নিয়ে মা ছুটে আসে আদালতে। শিশুদের কান্না সহ্য করা যায় না।
চকলেট কিনে রাখি তাই। চকলেট পেলে বাচ্চাদের কান্না থেমে যায়। মামলার শুনানি করতে সুবিধা হয়। শান্ত শিশুকে কোলে নিয়ে মায়েরা ঠিকমত সাক্ষী দিতে পারে।’
এই বিচারক আরো বলেন, ‘আদালত শিশুদের আদর করলে একসময় মা-বাবার মনটাও কেন জানি গলে যায়। আপসও হয় অনেক।
চকলেটগুলোর দাম কম, কিন্তু ব্রোকেন ফ্যামিলির এইসব শিশুদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা অনেক। সীমাহীন…’
প্রসঙ্গত, ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানো, পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসনে বিচারক মো. মতিউর রহমানের নানা উদ্যোগ বিচারপ্রার্থী, বিচার সংশ্লিষ্ট সহ সর্বসাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর ব্যতিক্রমী উদ্যোগে বেশকিছু পরিবার পুনরায় সংসার করছেন। বিচারকাজে আইনের মধ্যে থেকে দ্বন্দ্ব নিরসনে পারিবারিক মূল্যবোধকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়া এই বিচারকের মধ্যস্থতায় কলহ ভুলে অনেক পরিবার এক হয়েছে।