বিচারপতিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে তাদের অবসরকালীন বেশকিছু সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া পাঠানো হয়েছে। শিগগির আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যারা জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন না অর্থাৎ আইনজীবী থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন তাদের ভবিষ্য তহবিল সুবিধা দেওয়া হবে। এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২২ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ‘সামরিক শাসনামলে জারিকৃত অধ্যাদেশগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন সুপ্রিম কোর্ট জাজ (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ সময়োপযোগী করে নতুন আইন আকারে বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২২ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি সময়োপযোগী করার উদ্দেশ্যে আগের আইনের কিছু বিধান সংশোধন করা হয়েছে।’
প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়েছে, ‘অর্থ বিভাগের ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল স্মারকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ পেনশন পুনঃস্থাপন সংক্রান্ত সুবিধাদি ইতিমধ্যে প্রাপ্ত হওয়ায় এবং চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসারে সরকারি কর্মচারীগণ ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা ভোগ করায় বিচারকগণের জন্য এরূপ সুবিধাদি খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনজীবী হতে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণের ভবিষ্য তহবিল সংক্রান্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর সুবিধা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্তি ও প্রস্তাব করা হয়েছে।’
খসড়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খসড়া আইনটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত এবং গত বছরের ২৫ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৪নং ধারায় বলা হয়েছে- বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস হতে বিচারক নিয়োগের বিধান থাকায় মূল আইনের সিভিল সার্ভিস শব্দগুলোর পরিবর্তে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৯নং ধারা প্রস্তাব করা হয়েছে- অর্থ বিভাগ, প্রবিধি অনুবিভাগ, প্রবিধি-১ অধিশাখার ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল দেওয়া চিঠিতে ১৫ বছর অতিক্রান্তের পর বিচারপতিগণের পেনশন পুনঃস্থাপন বিষয়ে সম্মতি জানানো হয়েছে বিধায় উক্ত বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০নং ধারায় প্রস্তাব করা হয়েছে- চাকুরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারী ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধাপ্রাপ্ত হন বিধায় বিচারকগণের ক্ষেত্রে অনুরূপ সুবিধাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
খসড়া আইনের ১৬নং ধারায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিফ জাস্টিস অব দ্য সুপ্রিম কোর্ট শব্দগুলোর স্থলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অবসরগ্রহণের পূর্বে বা পরে মৃত্যুবরণ করলে ১৫ বছর পর্যন্ত পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তির বিধানটি বর্তমানে প্রচলিত নেই। এ কারণে বিচারকদের ক্ষেত্রে ওই সময়সীমা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
১১নং ধারায় সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ ২০২০ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পারিবারিক পেনশনের বিধানাবলি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুতোষিক ও পারিবারিক পেনশন সম্পর্কে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক তার অবসরের পর বা তার মৃত্যুতে তার পরিবার যে গ্রস পেনশন প্রাপ্য হবে, তার অর্ধেক বাধ্যতামূলক সমর্পণ করতে হবে এবং সমর্পণ করা টাকার জন্য পেনশনযোগ্য কর্মকাল ৩ বছর বা অধিক কিন্তু ৫ বছরের কম হলে, অবসর গ্রহণের পর বা পূর্বে মৃত্যু হলে ৩ মাসের বেতনের সমপরিমাণ আনুতোষিক পাবেন।
আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম-রেসিডেন্সের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা অবসরোত্তর বিশেষ ভাতা প্রাপ্য হবে।