সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অনিয়ম, বলপ্রয়োগ ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। একই সাথে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু পুন:নির্বাচন দাবি করা হয়।
আজ রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় সমিতি ভবনের চতুর্থ তলায় সংগঠনটির ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, গত নির্বাচনেও ফলাফল উল্টো ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার। এপ্রেক্ষিতে আমাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনকভাবে তিনি নীরব ছিলেন।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে তাঁকে আবারও কমিশনার করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। বিতর্কিত লোক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব নয়। বারবার অনাস্থা দেওয়া স্বত্বেও অদৃশ্য কারণে তিনিই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ বলেন, আমাদের আশঙ্কা সত্য হয়েছে। একটি নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যেমন কারচুপি হয়েছে, ঢাকা বারের এই নির্বাচনেও তা হয়েছে।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলামের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি বলেন, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। যার বিরুদ্ধে গত নির্বাচনেও অনিয়ম-দুর্নীতি ও ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ ছিল।
তিনি বলেন, এরপরও এবারের নির্বাচনে তাঁকে পুনরায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়। বিতর্কিত ব্যক্তিকে এই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা সভা-সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানালেও কাজ হয়নি। এরপর লিখিতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানো হয়। এছাড়া নীল প্যানেলের প্রার্থীরাও তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন।
এই আইনজীবী নেতা বলেন, কারণ তিনি দলীয় ফোরামের বাহিরে গিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন না, বাস্তবে সেই আশঙ্কা সত্য হয়েছে। তিনি সকল অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিতর্কিত নির্বাচনের শঙ্কা বাস্তবায়িত করেছেন।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যাজ পরে বহিরাগতরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সাদা প্যানেলের পক্ষে বলপূর্বক ভোট আদায় করেন। এছাড়া ব্যালট ছিনতাই করে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট কাটা হয়।
এসব বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি নীরব ভূমিকা পালন করেন। এজন্য সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম অনিয়ম, বলপ্রয়োগ, ভোট কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিরপেক্ষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু পুন:নির্বাচন দাবি করা হয় লিখিত বক্তব্যে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও নীল প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীসহ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০২২-২৩ কার্যকরি কমিটির নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদেই জয় পেয়েছে সরকার দল আওয়ামীলীগপন্থি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। অপরদিকে দুটি সম্পাদকীয় পদসহ মোট ছয়টি পদে জয় পায় বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত নীল প্যানেল।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। মোট ১৯ হাজার ৮৪৭ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দেন ১১ হাজার ৪১২ জন৷