ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর চারিত্রিক মর্যাদা সমুন্নতকরণে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬ (৩) ধারাসমূহের বাতিলই যথেষ্ট নয়; একই সাথে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত অন্যান্য ধারার সংশোধন প্রয়োজন বলে জানিয়েছে রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন (ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট)।
সাক্ষ্য আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অসম্মানজনক ১৫৫(৪) ও ১৪৬ (৩) ধারাসমূহ বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছে, উন্মুক্ত আদালতে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর প্রতি অবমাননাকর অসম্মানজনক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার বিধান সম্পূর্ণরূপে বাতিলের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সাক্ষ্য আইনে এ সম্পর্কিত ধারাসমূহ যথাক্রমে ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) বিলোপ করে সাক্ষ্য আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
‘রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন যৌন অপরাধসমূহের বিচারকার্যের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর চরিত্র যেন কোনভাবেই প্রাসঙ্গিক না হয়- এ বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাক্ষ্য আইনের ৫৩ ধারা (ফৌজদারী মামলায় পূর্ববর্তী সচ্চরিত্র প্রাসঙ্গিক) এর অধীনে এ বিষয়ক একটি উপধারা সংযোজনের দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে, যৌন অপরাধের বিচারকার্যে জেরা করার সময় অভিযোগকারিনীর চরিত্র বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনী এ বিষয়টি নিশ্চিত কররা লক্ষ্যে সাক্ষ্য আইনের ১৪৬ ধারা (জেরায় আইনগত প্রশ্ন) এর অধীনে এ বিষয়ক একটি উপধারা সংযোজনের দাবি জানাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন এর পক্ষ হতে “ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির সুরক্ষায় আইনগত সংস্কার” শীর্ষক একটি মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সাক্ষ্য আইনের প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী বিলটি (উপরোল্লিখিত প্রত্যাশিত সংশোধনীসহ) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিকট পেশ করা হয়।
বাংলাদেশে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশী/আইনের আশ্রয়প্রার্থী ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে সাক্ষ্য আইনের সুস্পষ্ট কিছু ধারার অধীনে উন্মুক্ত আদালতে প্রতিনিয়ত তার অতীত চরিত্র ও যৌন ইতিহাস সম্পর্কে অসম্মানজনক ও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; যা ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধ প্রমানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক এবং ভুক্তভোগীর সামাজিক অবস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ধর্ষণ অপরাধ প্রমাণের মূল উপাদান ‘সম্মতি’ কে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিক্ষেত্রে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর ‘চরিত্র’ ও ‘অতীত যৌন ইতিহাস’ কে গুরুত্ব দেয়া হয়; ফলে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারী বিচার পেতে আইনের দ্বারস্থ হয় না বা বিচারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে; যা অভিযুক্তকে অপরাধ থেকে অব্যাহতি দিতে সাহায্য করে।
সংবিধানে নারী পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও স্বাক্ষ্য আইনের সুস্পষ্ট কিছু ধারার মাধ্যমে শুধুমাত্র ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে অবমাননাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করা হয়; যা এক অর্থে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যেরই শামিল।
এজন্য ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর চারিত্রিক মর্যাদা সমুন্নতকরণে রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬ (৩) ধারাসমূহের বাতিলের পাশাপাশি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত এ আইনের অন্যান্য ধারাসমূহের সংশোধনের জোরালো দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই কোয়ালিশন যার মধ্যে রয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, উইক্যান, উইমেন ফর উইমেন, একশন এইড, এসিড সার্ভাইভারস ফাউন্ডেশন, ওয়াইডাব্লিউসিএ, কেয়ার বাংলাদেশ, জাস্টিস ফর অল নাও, ডাব্লিউডিডিএফ, নারীপক্ষ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ব্র্যাক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।