দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ২০২২-২০২৩ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ১৫ ও ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে শীর্ষ পদে প্রার্থীতায় বড় চমক রয়েছে। সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন এক নারী সহ চারজন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দল সমর্থিত আইনজীবী সংগঠন ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে।
আসন্ন নির্বাচনে বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকাল দলীয় সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সভাপতি পদে সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে আবদুন নূর দুলালের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল এবং সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে লড়বে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
এছাড়া সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এছাড়াও সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ।
বহুদিন ধরে সরকার সমর্থিত সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও সমমনা সংগঠন যেমন- গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ জাতীয় আইনজীবী সমিতি, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন, হিন্দু আইনজীবী পরিষদ ইত্যাদি মিলে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছিলো।
জানা গেছে, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
তবে অভিযোগ উঠেছে আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ তাদের শরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেনি। কোনো ধরণের আলোচনা ছাড়াই প্যানেল ঘোষণা করায় সরকার সমর্থিত সংগঠনটির প্রার্থীরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী নয় দাবি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী নই। আসন্ন নির্বাচনে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য এ সমঝোতা হয়নি উল্লেখ করে তিনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। ফলে তাদের ঘোষিত প্যানেল নিজস্ব সংগঠনের, সমন্বয় পরিষদের নয়।
ব্যারিস্টার তানিয়া অভিযোগ করে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, ‘অনেকেই আছেন যারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটার না, অনেকেই আছেন তারা ঢাকা বারের সদস্য, অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে কারা নির্বাচন করবেন, তারা নির্ধারণ করে দেন। এটা হতে পারে না।’
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তানিয়া আমীর ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, ‘যারা প্যানেল গঠন করে দিয়েছেন তারা এখানকার ভোটার না। অনেকের সরকারি পদে থাকায় তার ভোটাধিকার স্থগিত করা আছে। অথচ তারা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন, এখানে কারা নির্বাচন করবেন। এটা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা মেনে নিচ্ছেন না। এ কারণেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।
কেউ কেউ বলছেন আপনি নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে তিনি বলেন, ‘মাঠে যখন নেমেছি, শেষ পর্যন্ত আছি।’
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এই আইনজীবী বলেন, আশা করছি ভোটারদের অভূতপূর্ব সাড়া পাব। নির্বাচিত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের মর্যাদাকে আরও উঁচু জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। যার ফলে আইনজীবীরা এটাকে নিয়ে গর্ববোধ করবেন।’
প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলামের মেয়ে। ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে দ্বিতীয় নারী প্রার্থী।
প্রায় দুই দশক আগে, ২০০২ সালে সভাপতি পদে প্রথম নারী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার সিগমা হুদা। যিনি বিএনপি সরকারের দুই বারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী।
তবে সিগমা হুদা সেইবার নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। ব্যারিস্টার তানিয়া নির্বাচিত হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি।