বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়ির আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের জন্ম ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জের অষ্টবর্গ গ্রামে। ১৯৮৮ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। আইনজীবীদের ভালবাসা ও ভোটে জনপ্রিয় এই আইনজীবী নেতা একাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকীয় পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯৪-১৯৯৫ মেয়াদে ‘সহ-সম্পাদক’ এবং ২০০১-২০০২ মেয়াদে ‘সম্পাদক’ নির্বাচিত হন। সমিতির দায়িত্ব পালনকালে দল, মত ও সকল দুর্নীতির উর্ধ্বে থেকে পেশার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় সচেষ্ট ছিলেন। এছাড়া দীর্ঘ এক দশক (২০১০-২০২০) রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে গ্রেফতার ও বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছে। আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ বর্ষের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেলে সভাপতি পদপ্রার্থী তিনি। সম্প্রতি তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম –এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল হাসান কচি। একান্ত সাক্ষাৎকারে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী জানিয়েছেন নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে তাঁর বিশেষ পরিকল্পনার কথা।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় অতীতে দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য সমিতির ব্যানার ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কেমন হবে?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হলে সমিতিকে ব্যক্তিগত ও সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উর্ধ্বে রেখে শুধু আইনজীবীদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকব। অতীতেও এই সমিতির দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ও সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উর্ধ্বে থেকে বিজ্ঞ আইনজীবীদের সহযোগিতায় আমি কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যের বলিষ্ঠ কার্যকরী ভূমিকায় সততা, নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: বার ও বেঞ্চের সমন্বয় সাধনে সমিতি অতীতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে, এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: বার ও বেঞ্চের মধ্যে সবসময় সুসম্পর্ক সমন্বয় করে বিজ্ঞ আইনজীবীদের আইনপেশার সুবিধার্থে যুগোপযোগী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এছাড়া সকল বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নে যেকোন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে সবসময় সচেষ্ট থেকে ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: সমিতির অবকাঠামোগত উন্নয়নে আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি-না?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: মহান আইন পেশায় প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক নবীন আইনজীবী বন্ধু অত্র সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করে আসছেন। পরিতাপের বিষয়, সমিতির বিদ্যমান ভবনগুলোতে বিজ্ঞ বন্ধুদের বসার পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় তাদের পেশা পরিচালনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সমিতির উন্নয়ন ও ভবন সংস্কারের জন্য সম্প্রতি প্রায় ১৭ কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ ও চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড আইন পেশার প্রতি বর্তমান সরকারের ইতিবাচক মনভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। আমি চলমান উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে অত্যাধুনিক নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যেখানে বিজ্ঞ আইনজীবীদের জন্য ফিজিওথেরাপি সুবিধাসম্বলিত আধুনিক ক্লিনিক, জিমনেশিয়াম, কারপার্কিং, সুইমিং পুল, হলরুম, কিউবিকেলস এবং নারী আইনজীবীদের জন্য পৃথক আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণারসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে ইনশাল্লাহ।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: সমিতির সদস্যদের কল্যাণে আপনার পরিকল্পনা কী?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: প্রথমত, বারের ওকালতনামা বিক্রিসহ সকল কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব। এছাড়া বেনাভোলেন্ট ফান্ড (কল্যাণ তহবিল) বৃদ্ধি এবং জীবদ্দশায় এর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট থাকব। একইসাথে আমি নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের পৃথক যাতায়াত ও আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। সমিতির ঐতিহ্য ও মর্যাদা রক্ষায় সকলকে নিয়ে কাজ করব। প্রাণের সমিতির সকল বিজ্ঞ সদস্যদের অংশগ্রহণমূলক ও কর্মব্যস্ততাপুর্ণ করার লক্ষ্যে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে বিজ্ঞ আইনজীবীদের স্বার্থ ও আইন পেশার মর্যাদা রক্ষার্থে সর্বদা নিয়োজিত থাকব।
ইতোপূর্বে আমি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সরকারি অনুদানে স্বল্প সময়ে এনেক্স ভবন নির্মাণ করি এবং দল, মতের উর্ধ্বে বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কিউবিকেলস বরাদ্দ দিয়েছিলাম। আমি সভাপতি নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে সমতার ভিত্তিতে কিউবিকেলস বরাদ্দ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আদালত প্রাঙ্গণ নারী বান্ধব নয় বলে অনেক নারী আইনজীবীর অভিযোগ, আইনঙ্গন নারীবান্ধব করতে বারের ভূমিকা কেমন হবে?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: আমি অবশ্যই নারীবান্ধব সমিতির পক্ষে। নারী আইনজীবীরা যাতে পেশায় অধিক মনযোগী হতে পারে ও আইন পেশায় উৎকর্ষ সাধন করতে পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এক্ষেত্রে কমনরুম ও পর্যাপ্ত বসার স্থানের ব্যবস্থা করাসহ আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন করার পদক্ষেপ নেব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: নবীন আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই…
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: বিগত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তরুণ মেধাবী বিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুগণ এই সমিতির সদস্য হয়ে এ মহান পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। বয়সে তরুণ ও পেশায় নবীন আমাদের এই আইনজীবী বন্ধুগণ প্রতিনিয়ত মামলা পরিচালনাসহ নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে পেশাগত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ মামলা পরিচালনায় সর্বোত্তম সহযোগিতা প্রদান করব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: করোনাকালীন এ বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, অতীতের মতো জাঁকজমকপূর্ণ কিংবা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের সুযোগ নেই বললেই চলে, নতুন এই স্বাভাবিকতায় নির্বাচনী প্রচারণার পথও খানিকটা সীমিত হয়েছে, এ বিষয়ে ভোটারদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: এ কথা সত্য যে অতিমারির এই সংকটময় মুহূর্তে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কষ্টকর হলেও জীবন বাঁচানোর তাগিদে দেশ ও দশের স্বার্থে নতুন এই স্বাভাবিকতাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই করোনাকালীনসহ এযাবত যে সকল বিজ্ঞ আইনজীবীগণ মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাদের সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। নির্বাচনকালীন এই স্বল্প সময় এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবার সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে ভোট ও দোয়া চাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না বিধায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এজন্য ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সকল বিজ্ঞ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাকে আপনাদের পাশে থেকে সেবা করার সুযোগ করে দিতে আপনাদের মূল্যবান ভোট, দোয়া ও সমর্থন কামনা করছি। অবশেষে সকল বিজ্ঞ আইনজীবী ও তাঁর পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণসহ পেশাগত সাফল্য কামনা করছি।