মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বারবার সমন পাঠানো হচ্ছিল পাবনার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীকে। কিন্তু আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে গড়িমসি করেন তিনি। একইভাবে অপর একটি মামলাও সাক্ষী হিসেবে তাকে সমন পাঠানো হলেও তা অবজ্ঞা করে আদালতে আসেননি ওসি রওশন আলী। এতে আদলতে বিচারাধীন মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
এমতাবস্থায় কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান আদালত। এবার নড়েচড়ে বসেন ওসি। গত ২৬ জানুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর পর মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে আদালতে সশরীরে হাজির হন ওসি রওশন আলী। কেবল হাজিরই নয়; নিজের অবহেলার জন্য আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।
তবে আদালত ওসিকে ক্ষমা করে দিলেও প্রতীকী সাজা হিসেবে নগদ এক টাকা অর্থদণ্ড দেন। জরিমানার এই এক টাকা অনাদায়ে আদালতের কার্যক্রম যতক্ষণ চলবে ততক্ষণ তার কারাদণ্ড বহাল থাকবে বলে আদেশ দেওয়া হয়। রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এই আদেশ দেন।
শেষ পর্যন্ত আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সেই অর্থদণ্ড পরিশোধ করেন এবং ভবিষ্যতে এমন আর হবে না বলে জানান ওসি। এরপর তিনি আদালত থেকে বের হতে পারেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ইসমত আরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতে সাক্ষী দিতে আসার জন্য একাধিকবার সমন পাঠানো হলেও ওসি রওশন আলী আসেননি। কেবল তা-ই নয়, পরপর দুটি মামলায় আদালতের সমন অবজ্ঞা করেন ওসি রওশন আলী। পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হলে এ জন্য তিনি আজ লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, লিখিত আবেদনের পর আদালত তাকে ক্ষমা করেন। তবে আদালত মনে করেছেন, এমন ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে ওসির অনুশোচনা নেই। তাই সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আদালত ওসিকে এক টাকা অর্থদণ্ড দেন।
আগের ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট ইসমত আরা জানান, পুলিশ পরিদর্শক রওশন আলী আগে পাবনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে ৬ আগস্ট ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’ নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এক যুবককে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা দেন তিনি। পরে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালত তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
ওই মামলায় ইনফরমেন্ট সাক্ষী হিসেবে ওসি রওশন আলীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পরপর ছয়বার সমন পাঠান আদালত। কিন্তু তিনি আদালতের সমন তামিল করেননি। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রওশন আলীর হোয়াটসঅ্যাপেও সেই সমনের ছবি পাঠান। তিনি এরও উত্তর দেননি এবং গড়িমসি করে সাক্ষ্য দিতেও আসেননি।
এতে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। তাই কেনো তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ২৬ জানুয়ারি আদালত ওসিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান। এ নোটিশ পাওয়ার পর মামলার নির্ধারিত দিনে ৮ মার্চ হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওসি। তবে আদালত ওসিকে ক্ষমা করে দিলেও এক টাকা অর্থদণ্ড দেন। অনাদায়ে আদালত চলাকালীন পর্যন্ত কারাবাসের আদেশ দেন।
রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পেশকার হেমন্ত বর্মণ জানান, অর্থদণ্ডের আদেশের পর ওসি রওশন আলী তার কাছে জরিমানার এক টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপর তিনি জরিমানার সেই এক টাকা সোনালী ব্যাংকের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছেন।