মনিটরিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিচারাধীন মামলার আধিক্য হ্রাস ও মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার তথা দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণে অধস্তন আদালতের জন্য কতিপয় নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী গত ১ মার্চ প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অধস্তন আদালত মনিটরিংয়ে গঠিত কমিটির আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মামলাজট নিরসন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতে অধস্তন আদালতের প্রতি ৭ দফা নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়।
নির্দেশনাগুলো নিম্নরূপ
১. সকল অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকদের নির্দিষ্ট সময়ে এজলাসে উঠা, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে এজলাস ত্যাগ না করা এবং এজলাসে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
২. পারিবারিক মোকদ্দমাসমূহ দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তির স্বার্থে জেলার সকল সহকারী জজ/সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন পারিবারিক মোকদ্দমার সংখ্যা ৩০০ বা তদুর্ধ্ব হলে জেলার অতিরিক্ত সহকারী জজ কর্মরত থাকলে উক্ত অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে সকল আদালতের বিচারাধীন পারিবারিক মোকদ্দমা বদলি করে উক্ত অতিরিক্ত সহকারী জজের আদালতকে কেবলমাত্র পারিবারিক আদালতরূপে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা জজ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কোন জেলায় সহকারী জজ অতিরিক্ত আদালত না থাকলে ওই জেলার সহকারী জজ আদালতসমূহের মধ্যে যে আদালতে মোকদ্দমার সংখ্যা তুলনামূলক কম অনুরূপ আদালতে অন্যান্য আদালতের পারিবারিক মোকদ্দমাসমূহ স্থানান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা জজ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এছাড়া, জেলায় কর্মরত লিগ্যাল এইড অফিসার উক্ত পারিবারিক আদালত কর্তৃক প্রেরিত বিচারাধীন মোকদ্দমাসমূহ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য নিবিড়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
৩. সারাদেশে বিভিন্ন দেওয়ানি আদালতে ডিক্রিজারি মোকদ্দমাসমূহ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যতদ্রুত সম্ভব ডিক্রিজারি মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করবেন।
৪. সারাদেশে বিভিন্ন দেওয়ানি আদালতে একতরফা মোকদ্দমাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন রয়েছে, উক্ত মোকদ্দমাসমূহ যথাযথভাবে সমন জারিসহ অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৫. দশ (১০) বছরের অধিক পুরাতন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মোকদ্দমা/মামলাসমূহ, আপিল ও রিভিশনসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন।
৬. দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ এর বিচারিক আদালতের মামলাসমূহ দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তির স্বার্থে কোন দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ আদালতে দৈনিক ৪০ এর অধিক সংখ্যক জামিন সংক্রান্ত ফৌজদারি বিবিধ মামলা দায়ের হলে উক্ত ৪০ এর অধিক সংখ্যক ফৌজদারি বিবিধ মামলাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত/ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে বদলি করবেন।
৭. দেশের সকল জেলা জজ/দায়রা জজ বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধান সাপেক্ষে তাঁর প্রশাসনিক এখতিয়ারাধীন সকল আদালত/ট্রাইব্যুনালে মামলা, আপিল বা অন্য যে কোন আইনগত কার্যধারা বদলি করে সকল আদালত/ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা যুক্তিসম্মত করবেন।
বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই সাথে এই সার্কুলার ইতোপূর্বে জারীকৃত সার্কুলারসমূহের পরিপূরক হিসেবে গণ্য হবে। তবে পূর্বে জারি করা সার্কুলারের কোনো বিশয়ের সাথে এ সার্কুলারের কোনো নির্দেশনাবলী অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে এ সার্কুলারের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের ওপর ন্যস্ত। এই সাংবিধানিক নির্দেশনার আলোকে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস, ১৯৭৩ -এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী দেশের ৮ বিভাগের প্রত্যেক বিভাগের জন্য হাইকোর্টের রকজন বিচারপতির দায়িত্বে অধস্তন আদালত মনিটরিং করার জন্য পৃথক আটটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।