মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর বা মোহরানা অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। বিয়ের চুক্তিপত্রেও অন্যতম শর্ত দেনমোহর, যা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক একটি কর্তব্য। এই দেনমোহর পরিশোধ করা নিয়ে যুগান্তকারী এক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মোহরানা হিসেবে জমি গ্রহণ নিয়ে ‘জিয়াউল হক ও অন্যান্য বনাম ফারহানা ফেরদৌসী ও অন্যান্য’ নামে আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটির শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও আহমেদ সোহেলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছেন, স্বামীর পাশাপাশি তার পক্ষে যে কেউ (বাবা, ভাই বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন আত্মীয়) দেনমোহন পরিশোধের দায়িত্ব নিতে পারবেন। এছাড়া পারিবারিক আদালতে মামলা করে স্বামীর জমি মোহরানা হিসেবে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন স্ত্রী। একইসঙ্গে রায়ে মুসলিম আইনের অধীনে কোনো বৈধ সম্পত্তি, নগদ বা মূল্যবান জিনিসপত্র দেনমোহর হিসেবে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতে বাদী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম আলী মুর্তজা এবং বিবাদী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুরজিৎ ভট্টাচার্য।
মামলায় আদালতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ এবং দুইজন ইসলামি পণ্ডিত যথাক্রমে মুফতি মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী ও মুফতি মো. আবদুল্লাহ। এ মামলায় তারা লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য পেশ করে আদালতকে সহযোগিতা করেছেন।
মুসলিম বিয়েতে এটি যুগান্তকারী রায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এ রায়ের ফলে স্বামীর অবর্তমানে (দেনমোহর পরিশোধ না করে মারা গেলে) স্ত্রী তাঁর এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী জানান, জমির সম্পত্তি দেনমোহর হিসেবে পুনরুদ্ধার করার যে রায় দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।