দেশের অবহেলিত ও অনগ্রসর ‘মান্তা’ সম্প্রদায়ের ২৯টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মুজিববর্ষের’ উপহার সেমি পাকা ঘর পেয়েছেন। ঘর পাওয়া এসব পরিবারের মধ্যে এখন খুশির ঝিলিক। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তোলার নতুন সংগ্রামেও নেমেছে এক সময় দুঃখ-কষ্টে দিন কাটানো এই মান্তা পরিবারগুলো।
মান্তা সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত ভাসমান জীবন যাপন করে। নৌকায় জন্ম তাদের। বসবাস এবং মৃত্যুও সেখানে। নৌকায় মাছ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। এদের ৯৬টি পরিবার স্থায়ীভাবে মৎস্যবন্দর রাঙ্গাবালীতে বুড়া গৌরাঙ্গ নদীতীরে নৌকায় বসত করে। আরও প্রায় ৫০টি পরিবার অস্থায়ীভাবে নৌকায় ভাসমান জীবন যাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘মুজিব শতবর্ষে ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জমিসহ ঘর প্রদান কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে ২৯টি মান্তা পরিবার দুই শতাংশ জমিসহ এসব সেমিপাকা ঘর পেয়েছে। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং টিনের ছাউনি দেওয়া দুটি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর ও টয়লেটসম্পন্ন গৃহ পেয়েছে প্রতিটি পরিবার। গৃহের সামনে রয়েছে খোলা বারান্দা। প্রতিটি পরিবারের নামে ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে ছয়-সাত মাস আগেই। এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধাও পাবে তারা।
আরও ৩১টি মান্তা পরিবারের জন্য চর মোন্তাজ গ্রামে নতুন একটি আবাসন প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান। এ ছাড়াও ২৭টি পরিবারকে বেশ কয়েক বছর আগে আরেকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। বাকি ৯টি পরিবারের জন্যও জমি, ঘরসহ স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ঘর ও জমি পাওয়ার পর মান্তা সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ জায়গায় হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল লালনপালন, ক্ষেতখামার করে শাক-সবজির চাষবাস, দোকানপাট করে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ কেউ জালসহ মাছ ধরার উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করে উপার্জন করছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিকটবর্তী এলাকায় শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত মান্তা পরিবারের ছেলেমেয়ের জন্য ২০১৯ সালে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শিশুবাগান প্রাক-প্রাথমিক বোট স্কুল’ নামে একটি ভাসমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিবছর ৫০ জন শিশু প্রাক-প্রাথমিক স্তরে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘মুসলিম চ্যারিটি’র অর্থায়নে ‘জাগো নারী, বরগুনা’ এ স্কুল পরিচালনা করে।
মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নৌকায় নৌকায় মাছ ধরে ও বিক্রি করে দিন কাটাতেন তারা। ঝড়-ঝঞ্ঝায় অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মাথার ওপর যেমন ছাদ পেয়েছেন, তেমনি জীবন বদলানোর নতুন আশাও দেখছেন তারা।