অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের রুলে পক্ষভুক্ত হতে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল পাবজি গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ফলে দেশে পাবজি গেম বন্ধে আদালতের আদেশ বহালই থাকছে।
পাবজি গেম কর্তৃপক্ষের আবেদন খারিজ করে আজ বুধবার (২০ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. বদরোজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পাবজির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সামির সাত্তার। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
শুনানিতে পাবজি কর্তৃপক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, বাংলাদেশে পাবজি নিষিদ্ধ করায় সারাবিশ্বে কোম্পানিটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একইসঙ্গে ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে পাবজি খেললে শিশুদের ক্ষতি হয়না মর্মে আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাবজি খেলতে দেওয়া হচ্ছে বলেও আদালতকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়।
এসব যুক্তি বাংলাদেশে পাবজি গেম বন্ধ রাখার সুযোগ নেই বলে পাবজি গেম বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
এপ্রেক্ষিতে রিট আবেদনকারী পক্ষ থেকে শুনানিতে বলা হয়, অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপট সমান নয়। এজন্য এখানে তুলনা করার সুযোগ নেই।
এছাড়া পাবজি গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি কোম্পানি (সিঙ্গাপুর)। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কোন অফিস, রেজিস্ট্রেশন এমনকি অনুমোদনও নেই। অননুমোদিত এই প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যাচ্ছে, যা আইনের ব্যত্যয় এবং এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একই সাথে বিশেষজ্ঞ মতামত ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমগুলো খেলার কারণে দেশের কোমলমতি শিশুরা ভীষণভাবে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের রিটের পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করে ফ্রি ফায়ার গেমস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ‘গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড’।
আবেদনে বলা হয়, ফ্রি ফায়ার গেমের অসংখ্য প্লেয়ার বাংলাদেশে রয়েছে। আদালতের আদেশে ফ্রি ফায়ার গেমসের লিংক ব্লক করে দেওয়ার কারণে গ্যারিনা অনলাইন ব্যবসায়িকভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই রিট মামলায় গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড পক্ষভুক্ত হতে চায়।
পরে ২৬ অক্টোবর হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ এ আবেদন খারিজ করে দেন। এবার পাবজি কর্তৃপক্ষের করা প্রায় একই ধরণের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ আগস্ট সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভসহ ‘ক্ষতিকর’ অ্যাপ ও গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এর আগে একই বছরের ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম ও অ্যাপগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার।