কক্সবাজার থেকে মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী: জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কক্সবাজারে নুর নবী (২০) নামক এক যুবকের হাতের কব্জি কেটে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আসামিদের উপস্থিতিতে বুধবার (২৫ মে) কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- টেকনাফের বাহারছরার নয়াপাড়ার আজিজুর রহমান প্রকাশ হাজিরানের স্ত্রী জাহানারা (৫৫), ৩ ছেলে মোঃ আয়াত উল্লাহ প্রকাশ আরীফ (২৫), ফারুক (১৯), আমান উল্লাহ (২২) এবং কন্যা হাসিনা (৩০)।
রায়ে আসামীদের ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। তারমধ্যে মোঃ আয়াত উল্লাহ প্রকাশ আরীফকে সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড; ফারুককে সর্বোচ্চ সাজা ৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড; আমান উল্লাহকে সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড; হাসিনাকে ৪ মাস সশ্রম কারাদন্ড এবং জাহানারাকে ৩ মাস সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৭ মে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ৮/৯ জন লোক সংঘবদ্ধভাবে একই এলাকার মৃত বাঁচা মিয়ার পুত্র নুরুল আলমের বাড়িতে দা, চুরি, কিরিচ, রড, লাঠিসোটা নিয়ে অনুপ্রবেশ করে।
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে আয়াত উল্লাহ প্রকাশ আরীফ ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে নুরুল আলমের পুত্র নুর নবীর বাম হাতের কব্জি কেটে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীরা বাড়িতে থাকা নুরুল আলম, তার স্ত্রী হালিমা বেগম, পুত্র মোঃ মোস্তফা, কন্যা হাদিয়া আক্তার ও হাদিয়া আক্তারের স্বামী মোঃ হেলালকে কুপিয়ে, পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে।
এঘটনায় নুরুল আলমের কন্যা ও মোঃ হেলালের স্ত্রী হাদিয়া আক্তার বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৩২/২০১৬ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ২৫২/২০১৬ ইংরেজি (টেকনাফ)। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৮০/৪২৭/৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটি ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালত থেকে বিচারের জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলী হয়ে আসে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি বিচারের জন্য চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাদেরকে আসামীপক্ষ থেকে জেরা করা হয়।
মামলার আলামত প্রদর্শন, ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান, উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে ঘটনার ৬ বছর পর বিচারক আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী মামলার ৫ জন এজাহারভুক্ত আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন।