খুলনা ওয়াসার এমডির দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট
হাইকোর্ট; রিট (প্রতীকী ছবি)

সুপ্রিম কোর্টে তথ্য ইউনিট চালু করতে আইনজীবীর রিট

দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তথ্য প্রদান ইউনিট চালু করাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী শিশির মনির জানান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।

রিটে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে তথ্য সেল প্রতিষ্ঠা ও অফিসার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবাধ তথ্য প্রবাহ ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। অথচ সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সেল বা অফিসার নেই। তথ্য সেল না থাকায় এই অধিকার খর্ব হচ্ছে।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, রিট আবেদনকারী মৃত্যু দণ্ডাদেশ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। পরে তথ্য অধিকার আইনের বিধান বাস্তবায়নের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর আইনি নোটিশ দেন। তাতেও কোনো জবাব না পেয়ে এ রিট আবেদন দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ১৭ মে একই দাবিতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন রিটকারী আইনজীবী। নোটিশ হাতে পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তথ্য প্রদান ইউনিট চালু এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগের যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এর ব্যর্থতায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির।

নোটিশে যা বলা হয়

আমি, নিম্ন স্বাক্ষরকারী সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ সচেতন নাগরিক হিসেবে এই মর্মে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করছি যে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে বিধান করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ২০ নং আইন) প্রণয়ন করা হয়।

আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

আরও বলা হয়, আইনের ধারা ৩ মতে অন্যান্য প্রচলিত আইনের বিধানাবলীর উপর উক্ত আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। উক্ত আইনের ধারা ৪ মতে কর্তৃপক্ষের নিকট হতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে।

আইনের ধারা ২(খ)(অ) এ প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের আওতাধীন একটি কর্তৃপক্ষ। উক্ত আইনের ধারা ১০ অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। উক্ত আইনের বিধানের প্রতিপালনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইন প্রণয়নের এক যুগেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে এমন কোন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এমতাবস্থায় নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর বিধান প্রতিপালনের নিমিত্তে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তথ্য প্রদান ইউনিট চালু এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা অত্যাবশ্যক।