শিশুর ডিএনএ পরীক্ষায় মিললো ধর্ষণের সত্যতা, কারাগারে আইনজীবী
কারাগার (প্রতীকী ছবি)

ভুয়া পরোয়ানায় বিনাদোষে ৭ দিন কারাবাস, ক্ষতিপূরণ চাইলেন ভুক্তভোগী

‘আমি এমন কিছু করিনি যে আমার নামে ওয়ারেন্ট হতে পারে। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ভালো করে যাচাই করে দেখেন।’ সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে গ্রেফতার করতে আসা ব্যক্তিদের এভাবেই কথাগুলো বলে বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী মো. নাজমুল শেখ।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিনাদোষে ৭ দিন জেল খাটতে হয়েছে তাকে। পরবর্তীতে বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে ৭ দিন কারাভোগের পর গত ১৯ মে কারাগার থেকে মুক্তিপান তিনি।

ভুক্তভোগী নাজমুল কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের সালদিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন শেখের ছেলে। গত ১২ মে রাতে গাজীপুরে ভবানীপুর এলাকা থেকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে তাঁকে গাজীপুর জেলা কারাগারে দুই দিন ও পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ দিন রাখা হয়। ভুয়া ওয়ারেন্টে নাজমুলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের। পরে আদালতের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পান।

জেল থেকে বেরিয়ে গাজীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল বুধবার (২৫ মে) ওই ব্যবসায়ী স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মামলা তো দূরের কথা, আমার নামে একটি জিডিও নেই। কোনো অপরাধ করি নাই। অথচ পুলিশের ভুলে বিনা অপরাধে জেলখানার প্রকোষ্টে আমার কেটে গেল ৭টা দিন। জেলে কাটানো আমার ৭দিন কে ফিরিয়ে দেবে।’

গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর কালীগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মিন্টু মিয়া ও সঙ্গীয় ফোর্স নাজমুলের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছাড়াও মানসিক নির্যাতন করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। তবে এসআই মিন্টু মিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নাজমুল শেখ জানান, তিনি স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে গাজীপুর সদরের ভবানীপুর এলাকায় বসবাস করেন। গোল্ডেন হারভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে স্টোরকিপার পদে চাকরি করে সংসার চালান। গত ১২ মে রাত ১০টার দিকে ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে থকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে তিন ব্যক্তি তাকে হাতকড়া লাগিয়ে কালীগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।

নাজমুল বলেন, থানায় নেওয়ার পর পুলিশ তাঁকে জানায়, তার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। তখন তিনি ওয়ারেন্টের কপি দেখতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মিন্টু মিয়া তাঁকে মোবাইল ফোনে একটি ওয়ারেন্ট কপি দেখান।

তখন তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি এমন কিছু করেননি যে তাঁর নামে ওয়ারেন্ট হতে পারে। কোথাও ভুল হচ্ছে। তিনি পুলিশকে ভালো করে যাচাই করে দেখতে বলেন। কিন্তু পুলিশ কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ করেন নাজমুল।

তিনি আরো জানান, দুই দিন গাজীপুর জেলা কারাগারে থাকার পর ১৪ মে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে হাতকড়া এবং ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ঢাকায় নিয়ে যায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নামিয়ে রিকশা ও বাসে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কেরানীগঞ্জ কারাগারে।

তিনি জেলে থাকা অবস্থায় স্বজনরা বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ ও আদালতে খোঁজ নিয়ে তাঁর নামে কোনো মামলা নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমুল শেখ বলেন, আমার আত্মীয় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে নিশ্চিত হয় এমন কোনে মামলা কোনো থানায় হয়নি। পরবর্তীতে বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং-১ ঢাকা মহানগর সিআর ১৭৮০/১৫ নং মামলার কোন অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে তাকে বেকসুর খালাস দেন।

ব্যবসায়ী নাজমুল শেখ বলেন, এই ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি ও আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য স্থানীয় কিছু ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করে আসছে। ধারণা করছি তারাই ওই প্রতারণা করে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও জানান। এছাড়া তিনি বিনা দোষে জেল খাটায় ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এদিকে তার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট বাবুল মোড়ল জানান, ১৮ মে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরী ব্যবসায়ীকে কারাগার থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

ওয়ারেন্ট ভুয়া কিনা এমন প্রশ্নে কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জুবায়ের বলেন, আদালত থেকে জেলা পুলিশের কার্যালয়ে হয়ে ওয়ারেন্ট কপি তাঁদের কাছে আসে। এখানে ওয়ারেন্ট ভুয়া হওয়ার সুযোগ নেই।

নাজমুলকে গ্রেপ্তার মিশনে অংশ নেওয়া এসআই মিন্টু বলেন, নাজমুলের বাবার নাম ও ঠিকানা সবকিছুই ঠিক আছে। ওয়ারেন্ট ভুয়া কিনা সেটা তাঁরা শনাক্ত করতে পারেন না। আদালত থেকে জেলা পুলিশ কার্যালয় হয়ে থানায় আসে। এরপর আসামি গ্রেপ্তারের জন্য তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনায় থানা পুলিশসহ যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।