ছিন্নমূল এক শিশুকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তি বিচারবিভ্রাটের (ভুল বিচার) জন্য যথাযথ ফোরামে ক্ষতিপূরণ বা যথাযথ পুর্নবাসনের আদেশ চাইতে পারেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুজনকে খালাস দিয়ে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৬ জানুয়ারি ওই রায় দেন।
খালাস পাওয়া দুজন হলেন- মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে শংকর ও মো. জাকির হোসেন।
এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় রোববার (২৯ মে) হাতে পেয়েছেন বলে জানান শংকরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনসংক্রান্ত মামলায় ভুল বিচারের কারণে কেউ ভুক্তভোগী হলে ক্ষতিপূরণ বা যথাযথ পুর্নবাসনের আদেশ চাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে এ রায়ে। মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনসংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের রায় এটিই প্রথম। শংকর ও জাকির ইতিমধ্যে কারামুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা চাইলে সরকার বা উচ্চ আদালতে রিট করে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আনোয়ার ওরফে শংকর ও জাকির হোসেন ৬ বছর কনডেমড সেলে। তাঁরা এ মামলায় বিচারবিভ্রাটে ভুক্তভোগী, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি উপযুক্ত মামলা যেখানে যথাযথ ফোরামে ক্ষতিপূরণ বা যথাযথ পুর্নবাসনে আদেশ চাওয়া যায়।
আইনজীবীর তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার শাজাহানপুর ওভারব্রিজের নিচে কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশ থেকে ব্যাগসহ শংকরকে আটক করেন স্থানীয় জনতা। তাঁর ব্যাগে পাওয়া যায় এক শিশুর কাটা মাথা। পরদিন শংকরকে নিয়ে ভাওয়ালের শালবনে গিয়ে কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ এপ্রিল শাজাহানপুর থানায় মামলা হয়। তবে শিশুটির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ঢাকার আদালত রায় দেন। রায়ে ওই দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে গত ৬ জানুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, অভিযোগপত্রে থাকা ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন পুলিশ বিভাগের। ১ নম্বর সাক্ষী (বাদী) এক পুলিশ সদস্য ছাড়া তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করতে অন্যরা আদালতে আসেননি। আর এই সাক্ষীও আট বছর পর জেরার মুখোমুখি হন। এতে প্রতীয়মান হয় যে ৮–১০ বছর বয়সী নাম না জানা এক বালককে হত্যার ঘটনা প্রমাণে তাঁরা লুকোচুরি খেলা খেলেছেন।
অভিযোগপত্রে থাকা পুলিশ সদস্যরা কেন ১ নম্বর সাক্ষীর বক্তব্য সমর্থনে সাক্ষ্য দিতে আসেননি—সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রায়ের কপি পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে রায়ে।