পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের সঙ্গে জড়িত যে কোনো জনপ্রতিনিধিকে তার পদ থেকে অপসারণ এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার আইন প্রণয়নসহ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস এবং পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ দাবির কথা জানানো হয়। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দাবিগুলো তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হচ্ছে—
১. পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের সঙ্গে জড়িত যেকোনো জনপ্রতিনিধির ওই পদ থেকে অপসারণ এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
২. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করে কমিশনকে ক্ষমতায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কমিশনকে সরাসরি ক্যাবিনেট এর আওতায় পরিচালনা করতে হবে।
৩. সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলায় প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া) সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধ করার আইন পাস করতে হবে।
৪. পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকবল বৃদ্ধি, সব জেলায় পর্যাপ্ত লোকবলসহ অফিস স্থাপন এবং পরিবেশ রক্ষার কাজে প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নদীর পাশে যেকোনো প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে হলে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে সি এস রেকর্ড অনুসারে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে তা সংরক্ষণ করে ওই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. পরিবেশের ক্ষতি করার কারণে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানার কালচার বন্ধ করে আইন অনুসারে সাজা নিশ্চিত করতে হবে এবং সাজাপ্রাপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক সাময়িক বন্ধ ঘোষণার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৭. পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত সব বিভাগে দক্ষ, সৎ, যোগ্য, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করা ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে হবে।
৮. পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৩ গুণ বাড়িয়ে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
৯. পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা পরিবেশবাদী আইনজীবী, সাংবাদিক এবং সব ব্যক্তির সুরক্ষা প্রশাসনিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
১০. পরিবেশ রক্ষায় দক্ষ ও কার্যকর প্রশাসন গঠন এর লক্ষ্যে ‘পরিবেশ ইনস্টিটিউট’ গঠন এবং দেশ বিদেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ওই কাজে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর এ চৌধুরী বলেছেন, সাঁতার জানার পরও রাজধানীর চারপাশে প্রবহমান বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে কেউ পড়ে গেলে তিনি মারা যাবেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এসব নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। তাই এই দুই নদীতে মার্চ ও এপ্রিলে যদি কেউ পড়ে মারা যান, তবে তিনি সাঁতার জানেন না, এ জন্য মারা যাবেন না; পানির বিষাক্ততার জন্য মারা যাবেন।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, তিনটি শুশুক ভুলক্রমে তুরাগ নদীতে এসেছিল। সেগুলোকে পিটিয়ে মারা হয়নি। তারা বিষাক্ত পানিতে এসে মারা গেছে। ঢাকাবাসীর জন্য পানি (চারপাশের নদী) মরণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানির দূষণমুক্ত করতে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মনজুর এ চৌধুরী বলেন, ২০২৩ সালের ১৭ মার্চের আগে এই নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগামী জন্মদিনের আগে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এসব নদ-নদী দূষণমুক্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, এটা অসম্ভব ব্যাপার। এত বছরে কেউ পারেনি। আমি তাদের বলি, নয় মাসে দেশ স্বাধীন করা গেলে চারটি নদী দূষণমুক্ত করা যাবে না, এটা হতে পারে না।’
মনজুর এ চৌধুরীর ভাষ্য, ‘ঢাকার চারপাশে দূষণের জন্য যদি কোনো একটা প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে দায়ী করতে হয়, তাহলে আমি দায়ী করব ঢাকা ওয়াসাকে। ঢাকায় যত মলমূত্র, এর ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ এই চারটা নদীতে যায়। এদের দায়িত্ব ছিল পয়োনিষ্কাশন লাইন করা। পয়োনিষ্কাশন লাইনের মাধ্যমে এসব যাওয়ার কথা ছিল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। কিন্তু তা সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদীতে।’
খাল ও নালার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি নেওয়া পর নদীর পানির দূষণমুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুই সিটির কঠোর সমালোচনা করেন মনজুর এ চৌধুরী।
মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক ডিজি ড. সুলতানা আহমেদ, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহবার হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, দৈনিক আইন বার্তার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।