বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার নাম-পরিচয় গোপন করে ভারতে শিব শংকর হালদার নামে একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। তবে দুই দেশে একাধিক নামে পরিচিত হলেও আদালতে আজ নিজের পরিচয় স্বীকার করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (৭ জুন) কলকাতার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ আদালতে তোলা হয় পি কে হালদারকে। তখনই আদালতকে এ কথা জানান পি কে হালদার।
এদিন পি কে হালদার আদালতকে বলেন, ‘প্রশান্ত কুমার হালদার, শিব শংকর হালদা ও পি কে হালদার একই ব্যক্তি, আমিই।’
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) -এর পক্ষ থেকে আজ আদালতে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদারসহ তাঁর সহযোগীদের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া পি কে এবং তাঁর সহযোগীদের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে ইডি।
গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তারা পি কে হালদারের আরও পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে।
এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি। ১৭ মে তাঁদের সবাইকে এই আদালতে তোলে ইডি। আদালত প্রথমেই ১০ দিনের রিমান্ড দেন।
এরপর গত ২৭ মে কলকাতার নগর আদালত আজ পর্যন্ত বিচারিক হেফাজতে রেখে জেরার নির্দেশ দেন। আজ আবার পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে ফের ১৪ দিনের কারা হেফাজতের নির্দেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত পি কে হালদার ভারতে শিবশংকর হালদার নামে পরিচিত। ইডি বলেছে, শিবশংকর হালদার পরিচয় দিয়ে ভারতের একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র, যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পিএএন বা প্যান, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ইত্যাদি জোগাড় করেছিলেন। পি কে হালদারের সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে ইডি।
গত ১৪ দিনে কারাগারে থাকার সময় পি কে হালদারকে জেরা করে ইডি। সেই জেরার সময় উঠে আসা নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আজ তুলে ধরে ইডি। তারা জানায়, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের ৪৪টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হদিস পায় তারা।
এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। জিজ্ঞাসাবাদের সেই বয়ান রেকর্ডও করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের হদিস পায় ইডি। আদালতে ইডি জানায়, পি কে হালদারের ৪৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ক্যাশ রয়েছে।
এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে সাতটি ফ্লাটসহ প্রায় ৪০টি সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। তাদের আছে অন্তত ৬০ কোটি টাকা। ইডি আদালতকে জানায়, এ পর্যন্ত জেরায় তারা আরও জানতে পেরেছে, মালয়েশিয়ায় পি কের সাতটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে।
পি কে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তরা হলেন তাঁর ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার।