রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে আসা মোটরসাইকেল আটকে কাগজপত্র দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার আইনজীবী ইয়াসিন জাহান নিশান ভুঁইয়াকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার (৮ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত আদেশ দেন।
একইসঙ্গে এই মামলায় গ্রেফতার আসামিরদের মধ্যে নিশান ভুঁইয়ার স্বামী সোহাগ-উল ইসলাম রনি ও ভাই ইয়াসিন আরাফাত ভুঁইয়ার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আদালতে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট কাজী নজিবউল্লাহ্ হিরু, সাইদুর রহমান মানিক, মাহবুবুর রহমান, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টুসহ প্রমুখ আইনজীবী। এ সময় আদালতে চার শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত থাকা অ্যাডভোকেট আজমেরী মোশাররফ সুমী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অ্যাডভোকেট ইয়াসিন জাহান নিশান ভুঁইয়া অন্তঃসত্ত্বা, আদালত তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেছেন। আর তাঁর স্বামী ও ভাইয়ের তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এদিন এ মামলায় গ্রেফতার ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি ইয়াসিন জাহান নিশান ভুঁইয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অন্য পাঁচ আসামির সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ।
রিমান্ড চাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- সোহাগ-উল ইসলাম রনি, ইয়াসিন আরাফাত ভুঁইয়া, মো. শরিফ, মো. নাহিদ ও মো. রাসেল।
এর আগে তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে শ্যামপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাড়ে চারশো জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আহত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- ঘটনার পর আটক মোটরসাইকেল চালক বার্তা বিচিত্রা পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহাগ-উল ইসলাম রনি, তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান ভূঁইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম জানান, জুরাইন রেলগেট এলাকায় রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে আসা মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধারে আসা আরও দুই পুলিশ সদস্যকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা (মামলা নং-১১) করা হয়েছে।
ওসি মফিজুল আলম আরও জানান, আহত সার্জেন্ট আলী হোসেনের হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে। আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন- ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম, শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎপল চন্দ্র।
মামলার সূত্রে জানা যায়, জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে একটি মোটরসাইকেল আসছিল। এতে এক নারীসহ দু’জন আরোহী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন এবং উল্টো ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান।
পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশেপাশে থাকা সুযোগ সন্ধানী লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে বেধড়ক মারধর করে, পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দেয়।
অভিযুক্ত মোটরসাইকেল চালক সার্জেন্টের বুকের ওপর পা তুলে চেপে বসে। এ সময় ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার মধ্য থেকে একজন সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করেন।