ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের অধীনে পুলিশ কর্তৃক গাড়ি রিকুইজিশন সংক্রান্ত বিধান নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে রিকুইজিশন করা গাড়ি শুধুমাত্র জনস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে উল্লেখ করে কোনো গাড়ি সাত দিনের বেশি সময়ের জন্য রিকুইজিশন করা যাবে না বলে গাইডলাইন দিয়েছে আদালত।
২০১৯ সালের ৩১ জুলাই বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের কথা আজ বুধবার (০৮ জুন) গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে কয়েক দফা গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। সেগুলো হলো—
ডিএমপি আইনে রিকুইজিশন করার ক্ষমতা ডিএমপি কমিশনারের। গাড়ি শুধুমাত্র জনস্বার্থে ব্যবহার হবে, ব্যক্তিগত কাজে বা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যক্তিগত, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রিকুইজিশন করার ক্ষেত্রে মালিককে কারণ উল্লেখ করে আগে নোটিশ দিতে হবে।
রিকুইজিশন করা গাড়ি যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে তার বাইরে কোনো পুলিশ অফিসার বা তাদের পরিবার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো গাড়ি সাত দিনের বেশি সময়ের জন্য রিকুইজিশন করা যাবে না। রিকুইজিশনে থাকার সময় গাড়ির তেল ও আনুষঙ্গিক খরচ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
ডিএমপির মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে রিকুইজিশনকৃত গাড়ির ক্ষতিপূরণ এবং ডেইলি অ্যালাউন্স নির্ধারণ করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোনো গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ ডিএমপিকে তহবিল দেবে।
রিকুইজিশন এর বিষয়ে কোনো অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগী বহনকারী, পঙ্গু বা এয়ারপোর্টের বিদেশগামী যাত্রী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না। রিকুইজিশনকৃত গাড়ির রেজিস্টার মেইন্টেইন করতে হবে। যেখানে বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই গাইডলাইন সার্কুলার আকারে সংশ্লিষ্ট স্টেশেনের অফিসারকে পাঠাতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে রিট
পুলিশের রিকুইজিশন বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ -এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে ২০১০ সালে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। রিটে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ১০৩ (ক) ধারায় পুলিশের গাড়ির রিকুইজিশনের বিধান চ্যালেঞ্জ করা হয়।
একই বছর রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জনস্বার্থ ছাড়া কোনো গাড়ি রিকুইজিশন না করতে সরকার ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি গাড়ি রিকুইজিশন সংক্রান্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ১০৩ (ক) ধারাটি কেন বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিল আদালত।
এরপর ২০১৯ সালের ৯ জুলাই আদালত রুল শুনানিতে চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি মনোনীত করে। এ চার আইনজীবী হলেন- এম আমীর-উল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল এবং এ এম আমিন উদ্দিন।
সে রুলের ওপর দীর্ঘ শুনানি নিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশতাক হোসেন।