রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মামলায় দুই আইনজীবীকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এর প্রতিবাদে আদালতের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ আইনজীবীরা।
এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে রাস্তার পূর্ব পাশের ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। এতে আদালতে বিচারকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও (সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত) বিচারকদের গাড়ি সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি।
বিক্ষোভের মুখে দুই আইনজীবীর রিমান্ড স্থগিতের মৌখিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী রোববার (১২ জুন) রিমান্ডের বিষয়ে পুনরায় শুনানি হবে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিএমএম আদালত ভবনের সামনে রাস্তার দুই দিকের ফটক বন্ধ করে কয়েকশ আইনজীবী বিক্ষোভ করে ওই দুই আইনজীবীর মুক্তি দাবি করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতা, ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য বিচারকরা কয়েক দফায় বৈঠকে বসেন।
ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, বৈঠকে রিমান্ডের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয় এবং মৌখিকভাবে দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে না নিয়ে জেলহাজতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া আগামী রোববার এই দুই আইনজীবীর রিমান্ড বিষয়ে শুনানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু বিক্ষোভস্থলে এসে সাধারণ আইনজীবীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বৈঠকের কথা তুলে ধরে বলেন, নিশাত ভুঁইয়া আমাদের বোন। তার স্বামী আমাদের বোন জামাই। তার ভাই আমাদের ভাই। তাদের রিমান্ডের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করব।
একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত আইনজীবীরা তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন এবং ওই আইনজীবীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
জামিন পাওয়া আইনজীবী নিশাত ভুঁইয়া বলেন, আমার স্বামী ও ভাইকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুরের সময় আমরা পুলিশ হেফাজতে ছিলাম। যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের গ্রেফতার না করে, যারা আমাদের পানীয় ও খাবার দিতে গেছে তাদের আটক করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার (৮ জুন) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত দুই আইনজীবীসহ ৫ জনের তিন দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক ইয়াসিন আরাফাত ডেইরী, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
সোহাকুল ইসলাম বার্তা বিচিত্রা ডটকম নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশক। তাঁর স্ত্রী ইয়াছিন জাহান ওই সংবাদমাধ্যমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এদের মধ্যে সোহাকুল শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং ইয়াসিন জাহান ও তাঁর ভাই ইয়াসিন আরাফাত আইনজীবী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে বের হন সোহাকুল। তাঁর স্ত্রীর মাথায় হেলমেট না থাকায় জুরাইন সিগন্যালে তাঁদের আটকান ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ইয়াছিন জাহান পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে একজন ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় সোহাকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ইয়াছিন জাহানসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে শ্যামপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। মঙ্গলবারই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর বুধবার আসামিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন শ্যামপুর থানার পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ।
অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর ইয়াছিন জাহানের জামিন মঞ্জুর করেন।
আসামিদের রিমান্ডে পাঠানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বেলা সাড়ে তিনটা থেকেই আদালত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক আইনজীবী। বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময়ও ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তার আইনজীবীদের মুক্তির দাবিতে তাঁদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাঁরা বলেন, মামলায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়।