করোনাকালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা এক বছর বন্ধ ছিল। সম্প্রতি পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (১৫শ বিজেএস) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ায় অনেকেই আসন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে পারছেন না।
এজন্য করোনাকালীন পরীক্ষা না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বয়সসীমার কারণে বাদ পড়ে যাওয়া প্রার্থীদের শেষ বারের মতো ১৫শ বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্ধশতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী গত ১৯ মে কমিশনের সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা আসন্ন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থী। আপনি ইতোমধ্যে অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে এবং এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ মে পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (১৫শ বিজেএস) পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, এখন পর্যন্ত ১২টি বিজেএস পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে এ কমিশন সহকারী জজ চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি জনিত কারণে ওই বছর কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে মহামারির করার গ্রাসের কারণে বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞপ্তি না পেয়ে একটি মহামূল্যবান বছর পরীক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। যা তাদের পরীক্ষার্থী জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি সৃষ্টি করেছে এবং চাকরির বয়সসীমায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। যেখানে ২০২১ সালে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীদের জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নির্ধারিত বয়সসীমা ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৪৩তম বিসিএস’র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। ৪৪তম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। যা উক্ত কমিশনের করোনাকালীন বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন ও জীবিকা তথা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সমানাধিকার রক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু আইন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকগণের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বাদ পড়ে যাওয়া বছরটিতে (২০২০) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা হাজারো শিক্ষার্থীর উক্ত সুযোগের সমতার অধিকার নিশ্চিতকরণে ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত করেছে।
অতএব অভিভাবকতুল্য চেয়ারম্যানের নিকট আকুল আবেদন এই যে, উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে আমাদেরকে আসন্ন ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আবেদনকারীদের একজন ওয়াসিয়া রহমান তোয়া। বয়সসীমা অতিক্রম করায় আবেদন করতে পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, আমাদের দাবী খুবই মানবিক। কারণ করোনাকালে বিজ্ঞপ্তি না হওয়ায় শেষবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হারিয়েছি। এখন যদি কমিশন মহামারির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাক ডেট দিয়ে বয়সসীমা নির্ধারণ করেন তাহলে আমরা জুডিসিয়ারিতে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের শেষ একটা সুযোগ পাবো।
ওয়াসিয়া রহমান বলেন, দেখুন, চতুর্দশ বিজেএস -এ বয়সসীমা নির্ধারণে ২৫ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। ফলে সে বছর যাদের বয়স ৩১ পেরিয়েছিল তারাও আবেদন করার যোগ্য ছিল। কিন্তু এবার বয়সসীমা নির্ধারণে ১ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে প্রায় ২২ মাসের একটা দীর্ঘ ব্যবধান তৈরি হয়েছে এবং হাজারো প্রার্থী আবেদনের যোগ্যতা হারিয়েছে শুধুমাত্র বয়স বিবেচনায়।
তিনি আরো বলেন, কমিশনের কাছে আমরা চাকরি চাইছি না, বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিও করছি না। শুধু অনুরোধ করছি এই ২২ মাসের ফারাকে আমাদের মতো যাদের জীবন ও স্বপ্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলেছে ব্যাক ডেট দিয়ে যেন শেষ একটা সুযোগ করে দেওয়া হয়।