দেশের বিচার বিভাগে জিজিটাল পরিষেবার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে ‘আমার আদালত’ নামে নতুন মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে সরকার।
উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের বিচারিক সেবা ও তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে আজ শনিবার (১১ জুন) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই মোবাইল অ্যাপটি উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে এটুআই, ইউএনডিপি ও আইন মন্ত্রণালয়।
অধস্তন আদালতের জন্য প্রস্তুতকৃত অনলাইন কজলিস্ট (মামলার দৈনন্দিন কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড সম্বলিত এই অ্যাপের মাধ্যমে আদালতে চলমান মামলার যাবতীয় তথ্য মুহূর্তেই জানা যাবে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে। আর নিষ্পত্তি হওয়া মামলার তথ্যও পাওয়া যাবে জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড সিস্টেমে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এই সরকারের আমলে কাগজবিহীন দাপ্তরিক কাজের আওয়তায় ২ হাজারের বেশি সেবা ডিজিটালাইড করা হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য বিচার বিভাগের সেবাগুলোকেও কাগজবিহীন করা। বিচার কাজগুলো সহজ করা।
তিনি বলেন, গতানুগতিক সাধারণ যেসব কাজে বিচারক ও আইনজীবীদের অতিরিক্ত সময় ও মেধার অপচয় হয় সেসব কাজ থেকে তাঁদের সরিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ আদালতের টিপিকাল রুটিন ওয়ার্কগুলো রোবট দ্বারা সম্পাদন করা হবে। যাতে করে বিচারকাজের সেসব জায়গায় বেশি সময় ও মেধা প্রয়োজন হয় সেসব কাজে আইনজীবী ও বিচারগণ মনোনিবেশ করতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বিচারিক সেবাগুলো স্বল্প সময়ে ও কম খরচে পৌঁছে দিতে ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। এটি শিগগিরই পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হবে।
ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এ অন্য কোন দেশের মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে না। বরং এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে একটি নিজস্ব মডেল তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য একটু সময় বেশি লাগছে। তবে এটি নিসন্দেহে একটি আধুনিক প্রজেক্ট হবে, যাতে করে স্বল্প খরচে নতুন একটি মডেল সারা বিশ্বকে উপহার দিতে পারি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের আওয়াতায় প্রায় ২ হাজার এজলাস ডিজিটালাইজড করা হবে। সম্পূর্ণ অডিও রেকর্ডিং সিস্টেম থাকবে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল টার্মিনাল হবে, যাতে আদালতে না কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়া যাবে। এছাড়া ৯টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ৬৪টি ক্যামেরা ট্রায়াল রুম এবং অনলাইনে নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ‘বৈঠক’ নামের নিজস্ব ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ থাকবে। যেন কোন তথ্য অন্য দেশে চলে না যায়, কারণ বিচার বিভাগের তথ্য খুবই স্পর্শকাতর।
এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে দেশের প্রত্যেকটি বার এসোসিয়েশনে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ একটি ডিজিটাল সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সরোয়ারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ইউএনডিপির রেসিডেন্স রিপ্রেজেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ, নাটোর, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও শেরপুর এই আট জেলার ৩২ জন বিচারক ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক উপস্থিত হতে পারেননি।
যেসব সুবিধা থাকছে ‘আমার আদালত’ অ্যাপে
ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অনলাইন কজলিস্ট (মামলার কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট কার্যদিবসে আদালতে বিচারাধীন মামলার তালিকা জনগণ কিংবা বিচার সংশ্লিষ্ট যেকেউ causelist.judiciary.org.bd ওয়েবসাইট ও আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ ভিজিট করে তাঁর মামলার সর্বশেষ তথ্যাদি পাবেন।
ওয়েবসাইটে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরে জেলা এবং সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম সিলেক্ট করে বিচারপ্রার্থীগণ তাঁদের মামলার সর্বশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা জানতে পারবেন।
এছাড়া জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড বা বিচার বিভাগীয় ড্যাশবোর্ড-এর মাধ্যমে অধস্তন আদালতসমূহে বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলা সম্পর্কিত সকল ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা হবে। এতে অধস্তন আদালতের মনিটরিং ও ট্র্যাকিং সিস্টেম হিসেবে এর মাধ্যমে আদালতসমূহের প্রকৃত অবস্থা, বিচারকর্মের গতি-প্রকৃতি এবং বিচারিক নানান পরিসংখ্যান জানা যাবে।
বিচারপ্রার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ, বিচারকগণ এবং আইনজীবীবৃন্দ স্ব-স্ব প্রয়োজনে আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ অধস্তন আদালতের জন্য প্রস্তুতকৃত সকল ডিজিটাল সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। বিচারক, আইনজীবী এবং জনসাধারণ পৃথকভাবে এই অ্যাপের বিভিন্ন ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল-প্লে-স্টোর থেকে আমার আদালত (মাইকোর্ট) সার্চ করে যেকেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবে।