দীপজয় বড়ুয়া: একটা দেশ যে আইন দিয়ে চলে তাকে আমরা সাংবিধানিক আইন বলি। আর এই সাংবিধানিক আইনগুলো যদি লেখা থাকে তাকে আমরা বলে থাকি সংবিধান। কোন রাষ্ট্রের সরকার কিভাবে গঠিত হবে, তার ক্ষমতা কি থাকবে, কি রূপে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কি সম্পর্ক, শাসক ও শাসিতের মধ্যে কি সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে- সেই সকল বিধানের সমষ্টিই হল কোন দেশের সংবিধান।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। আমাদের সংবিধানের ৩য় ভাগে ১৮টি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত এই ১৮টি অধিকারের প্রকৃতি ও ভোগের নিশ্চয়তা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যখন কতিপয় মানবাধিকারকে কোন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাদেরকে মৌলিক অধিকার বলা হয়।
মৌলিক অধিকারগুলো হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। মৌলিক অধিকারগুলোকে পরিবর্তন করলে স্বয়ং সংবিধানকেই পরিবর্তন করতে হয়। সংবিধানের ৪৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কারো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সে সংবিধানের ১০২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা দায়ের করতে পারেন।
মৌলিক অধিকার কি?
মৌলিক অধিকার হল একটি দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত মৌলিক মানবাধিকার যা সমস্ত নাগরিকের/মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এগুলি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই তৈরি করা হয়।
Fundamental Rights/মৌলিক অধিকারগুলো সর্বদা নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয় এবং যা প্রতিটি নাগরিককে তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণ মাত্রায় বিকাশ করতে সহায়তা করতে পারে। দেশের মধ্যে স্বৈরাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করে। ব্যক্তি ও দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য মৌলিক অধিকার খুবই প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ:
১. আইনের চোখে সমতা (অনুচ্ছেদ -২৭)
২. ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য (অনুচ্ছেদ – ২৮ (১)
৩. নারী পুরুষের সমঅধিকার (অনুচ্ছেদ – ২৮ (২)
৪. সরকারী নিয়োগ লাভে সমতা (অনুচ্ছেদ – ২৯ (১)
৫. আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার (অনুচ্ছেদ – ৩১)
৬. জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা লাভের অধিকার (অনুচ্ছেদ – ৩২)
৭. গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ (অনুচ্ছেদ – ৩৩)
৮. জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ (অনুচ্ছেদ – ৩৪)
৯. বিচার ও দন্ড সম্পর্কে (অনুচ্ছেদ – ৩৫)
১০. চলাফেরার স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ – ৩৬)
১১. সমাবেশের অধিকার (অনুচ্ছেদ – ৩৭)
১২. সংগঠনের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ – ৩৮)
১৩. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ – ৩৯)
১৪. পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ – ৪০)
১৫. ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ – ৪১)
১৬. সম্পত্তির অধিকার (অনুচ্ছেদ – ৪২)
১৭. গৃহ ও যোগাযোগ (অনুচ্ছেদ – ৪৩)
১৮. মৌলিক অধিকার বলবতকরণ (অনুচ্ছেদ – ৪৪)
মানবাধিকার কি?
মানবাধিকার বলতে বোঝায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অতি আবশ্যিক সেই সকল সুযোগ-সুবিধা যেগুলি জন্মসূত্রে প্রাকৃতিক ভাবে মানুষ অর্জন করে..। সাধারণত অধিকার বলতে বোঝায় রাষ্ট্রীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত কিছু সুযোগ সুবিধা.., কিন্তু মানবাধিকার হলো সেই সকল সর্বজনীন মানবিক অধিকার যেগুলি সীমিত ও সংকীর্ণ রাষ্ট্রীয় অধিকারের থেকে অনেক ব্যাপক এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য একান্ত অপরিহার্য..।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। সেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলি চিহ্নিত করা হয়। এ জন্য ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসাবে পালিত হয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ অনুযায়ী, মানবাধিকার অর্থ- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত কোন ব্যক্তির জীবন, অধিকার, সমতা ও মর্যাদা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলে ঘোষিত মানবাধিকার।
আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে।
মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?
মৌলিক অধিকার হল একটি দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত মৌলিক মানবাধিকার যা সমস্ত নাগরিকের/মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এগুলি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই তৈরি করা হয়।
Fundamental Rights/মৌলিক অধিকারগুলি সর্বদা নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয় এবং যা প্রতিটি নাগরিককে তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণ মাত্রায় বিকাশ করতে সহায়তা করতে পারে। দেশের মধ্যে স্বৈরাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করে। ব্যক্তি ও দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য মৌলিক অধিকার খুবই প্রয়োজনীয়।
মৌলিক অধিকারের সহিত অসামঞ্জস্য আইন বাতিল
২৬। (১) এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
(২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।
(৩) সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত সংশোধনের ক্ষেত্রে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।
[48 DLR (AD)184] Bangladesh National Curriculum and Text Book Board Vs. AM Shamsuddin & Others. ‘Fundamental rights can never be invoked for violating any provision of law or other man’s under the law.’
ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য
২৮। (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
[55 DLR (AD) 132] Bangladesh Biman Vs. Rabia Bashri Irane, “While interpreting Article 28 of the Constitution observed that, the matter of fixing the age of retirement of the stewards and stewardesses being gender-based the same is discriminatory and violative of article 28 of the Constitution.”
সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা
২৯। (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই-
(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সমপ্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সমপ্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে,রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
[46 DLR (AD) 19] Bangladesh Vs. Azizur Rahman, “The guarantee of ‘equal opportunity’ in respect of employment is available at the stage of initial appointment and of promotion. Merely because chances of promotion of then writ petitioners may be said to have been affected by the impugned Rules of 1990 would not amount to denial of equality of opportunity In respect of the employment, as chances of promotion are not condition of services.”
গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ
৩৩। (১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।
(২) গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (১) ও (২) দফার কোন কিছুই সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না,
(ক) যিনি বর্তমান সময়ের জন্য বিদেশী শত্রু, অথবা
(খ) যাঁহাকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন গ্রেপ্তার করা হইয়াছে বা আটক করা হইয়াছে।
(৪) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইন কোন ব্যক্তিকে ছয় মাসের অধিককাল আটক রাখিবার ক্ষমতা প্রদান করিবে না যদি সুপ্রীম কোর্টের বিচারক রহিয়াছেন বা ছিলেন কিংবা সুপ্রীম কোর্টের বিচারকপদে নিয়োগলাভের যোগ্যতা রাখেন, এইরূপ দুইজন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত একজন প্রবীণ কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত কোন উপদেষ্টা-পর্ষদ্ উক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হইবার পূর্বে তাঁহাকে উপস্থিত হইয়া বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগদানের পর রিপোর্ট প্রদান না করিয়া থাকেন যে, পর্ষদের মতে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্তকাল আটক রাখিবার পর্যাপ্ত কারণ রহিয়াছে।
(৫) নির্বতনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে আটক করা হইলে আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে যথাসম্ভব শীঘ্র আদেশদানের কারণ জ্ঞাপন করিবেন এবং উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য-প্রকাশের জন্য তাঁহাকে যত সত্বর সম্ভব সুযোগদান করিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় তথ্যাদি-প্রকাশ জনস্বার্থবিরোধী বলিয়া মনে হইলে অনুরূপ কর্তৃপক্ষ তাহা প্রকাশে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
(৬) উপদেষ্টা-পর্ষদ কর্তৃক এই অনুচ্ছেদের (৪) দফার অধীন তদন্তের জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নির্ধারণ করিতে পারবেন।
[52 DLR 526] Mehnaz Sakib Vs. Bangladesh, “Since the detenu was arrested under section 54 of the Code it was incumbent upon the police to produce her before a magistrate within 24 hours but the police having not done so then right guaranteed to her under the Constitution has been violated.”
[45 DLR (AD) 89] Habiba Mahmud Vs. Bangladesh, “It is needless to add, that in case of mollified the mater of non disclosure will be justiciable one. But for the clear constitutional sanction provided in Article 33(5) a non-disclosure of fact that was considered the prejudice of the detune ought to be regarded as violation of basic principle of national justice.”
বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ
৩৫। (১) অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।
(২) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না।
(৩) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন।
(৪) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না।
(৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।
(৬) প্রচলিত আইনে নির্দিষ্ট কোন দণ্ড বা বিচারপদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগকে এই অনুচ্ছেদের (৩) বা (৫) দফার কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না।
[54 DLR (AD) 154] Abu Siddiqui Vs. Bangladesh, “The other contention that action of respondent non.3 was violative of Article 35(4) of the Constitution is also of no substance since the notices impugned were issued in connection with an enquiry as regard the information received against the petitioners. The petitioners are not accused of any offence and as such, protection under Article 35(4) is not available to them.”
[45 DLR (AD) 89] Habiba Mahmud Vs. Bangladesh, “It is needless to add, that in case of mollified the mater of non disclosure will be justiciable one. But for the clear constitutional sanction provided in Article 33(5) a non-disclosure of fact that was considered the prejudice of the detune ought to be regarded as violation of basic principle of national justice.”
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা
৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের,
এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের,
এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
[48 DLR (AD) 184] Bangladesh National Curriculum and Text Board Vs. Samsuddin and Others, “The right of freedom of speech and expressions claimed by the writ petitioners does not extend to the right of printing publishing of ‘note books’ or ‘text-book’ prepared and published by the Text Book Board under statutory authority. The Court was not justified in declaring the impugned Act to be ultra vires of Article 39(2) of the Constitution.”
ধর্মীয় স্বাধীনতা
৪১। (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;
(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।
(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।
[54 DLR 413] Dewanbagh Darbar Sharif and another Vs. Bangladesh and others, “It was held that Absolute Restriction may be imposed by law for the sake of public order or morality. Restriction may be imposed to regulate the activities of a religious group and only in extreme cases prohibition may be imposed.”
[23 BLD (AD) 21] Islamic Law Research Center and Legal Aid Bangladesh Vs. Eva Suananda Chowdhury.
সম্পত্তির অধিকার
৪২। (১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।
(২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় ও প্রদানের নীতি ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরূপ কোন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
[48 DLR 547] Syeda Chand Guttara and others Vs. Bangladesh, “The very fact the inclusion of the disputed property in the ”kha” list had been found by us to be ex-facie void for want of jurisdiction and in violation of Article 42 of the Constitution it is our view that the petitioners can come directly to this court for protection of their fundamental rights even though an alternative remedy is available.”
[46 DLR-130] Alhaj Mohammad Rahimuddin Bhorasha Vs. Bangladesh.
গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ
৪৩। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের
(ক) প্রবেশ, তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে;
এবং
(খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকিবে।
মৌলিক অধিকার বলবৎকরণঃ
৪৪। (১) এই ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করিবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।
[AIR 1961 (SC) 609] “It was held that the principle of exhaustion of statutory remedy is applied as a general rule, in the matter of issuing certiorari and the superior court will ordinarily decline to interfere until aggrieved party has exhausted his statutory remedies.”
• State of UP Vs. Nooh AIR 1958 86
• 43 DLR 237 Serajul IslamVs. D.G. Food,
• 41 DLR(AD) 165 Anwar Hossain Chowdhury Vs. Bangladesh.
মৌলিক অধিকার বনাম মৌলিক দায়িত্বসমূহ
মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক দায়িত্বগুলো আসে তখন একইরকম মনে হয় এবং একই সাথে দুটি শর্ত থাকে যা এক এবং একইভাবে যখন তাদের অর্থ ও ধারণা আসে কঠোরভাবে বলছে তারা তাই নয়। তারা আলাদাভাবে বুঝতে হবে যে দুটি ভিন্ন পদ।
মৌলিক অধিকার তাদের নাগরিকদের কাছে বিশ্বের কয়েকটি দেশের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত অধিকার এবং স্বাধীনতা। এই অধিকার একটি আইনি অনুমোদন আছে এবং একটি আদালতে প্রয়োগযোগ্য।
অন্যদিকে মৌলিক দায়িত্ব হলো দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার দেওয়া মৌলিক দায়িত্ব বা দায়িত্ব। মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক দায়িত্ব মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।
একটি মৌলিক অধিকার এ কারণে যে আপনি একজন মানুষ, মৌলিক দায়িত্ব থাকলেও একজন মানুষের মতো আপনার উপর দায়িত্ব হিসাবে বিদ্যমান। সুতরাং মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে প্রাথমিক পার্থক্য হচ্ছে মৌলিক অধিকার আপনার কাছে প্রদত্ত বিশেষাধিকারের উপর ভিত্তি করে করা হয় এবং মৌলিক দায়িত্ব দায়বদ্ধতা ভিত্তিক।
যে কোনও নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাতে সমগ্র সমাজকে উপকৃত করা যায়। অন্যদিকে এই বিষয়ে কোন নাগরিকই জীবনের অধিকার, বক্তৃতা ও লেখার স্বাধীনতা সম্পর্কিত তার মৌলিক অধিকারগুলি ব্যবহার করতে পারে। এটি মনে রাখা আকর্ষণীয় যে বক্তৃতা স্বাধীনতার একটি নাগরিকের কাছে কিছুটা ন্যায্য অধিকার। সারা বিশ্ব জুড়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলির অতএব, তাকে দেওয়া মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য ব্যক্তিটির উপরে নির্ভর করে।
প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলি প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুদের যত্নশীল, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সরকারী দায়িত্ব, কর প্রদান, ট্র্যাফিক নিয়ম এবং প্রবিধানের আনুগত্য এবং অনুরূপ। মৌলিক কর্তব্যগুলি পরিহার করে সমস্যার একটি নাগরিক বাড়ে। মৌলিক অধিকারের অপব্যবহার অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার জন্য একটি নাগরিক করে তোলে। এই মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক দায়িত্ব মধ্যে পার্থক্য।
লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।
তথ্য কণিকা
▪গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
▪ বাংলাদেশের সংবিধান-এডভোকেট আরিফ খান
▪বাংলাদেশের সংবিধান-এডভোকেট মোঃ মিজানুর রহমান
▪আইনের সহজ পাঠ- এডভোকেট মাহামুদ ওয়াজেদ
▪উইকিপিডিয়া