সদ্য প্রয়াত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক কাজী এবাদুল হকের রূহের মাগফিরাতের জন্য কুলখানীর আয়োজন করা হয়েছে।
আজ রোববার (১৭ জুলাই) বাদ আসর সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদে এ কুলখানীর আয়োজন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দিনগত রাত ১২টার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান বিচারপতি এবাদুল হক। শুক্রবার জুমার নামাজের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এবাদুল হক ১৯৩৬ সালের ১লা জানুয়ারি ফেনী জেলার বালীগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা কাজী আবদুল হক এবং মাতা হুরেনেছা বেগম। তিনি ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন এবং ছয়মাস সেখানে পড়াশোনা করেন। এই সময়ে তিনি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা কলেজ থেকে তিনি ফেনী কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং ১৯৫২ সালে ফেনী কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি ফেনী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ফেনী শহরে বাংলা ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে ফেনী ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৫৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি উপাধি অর্জন করেন।
কাজী এবাদুল হক ১৯৫৯ সালে ফেনী মহকুমা আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা জেলা আদালতে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা উচ্চ আদালতের আইনজীবী নিযুক্ত হন এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৯০ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে যোগদান করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন ১৯৯৮ সালে “নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র” মামলার রায়টি বাংলায় প্রদান করে নজির সৃষ্টি করেন। তাঁর এবং বিচারপতি হামিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চটিই প্রথম বাংলা ভাষায় রায় দেয়, যা আইন সাময়িকীতে (ঢাকা ল’ রিপোর্টার্স ৫০ ও ৫১ ডিএলআর) প্রকাশিত হয়। ২০০০ সালে তিনি আপিল বিভাগে বিচারপতি পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার স্ত্রী অধ্যাপক শরিফা খাতুনও ২০১৭ সালে একুশে পদক অর্জন করেন। তার মেয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি।