মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির দ্বারা আঘাত করে জখম করার হাস্যকর অভিযোগ এনে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও)। এ বিষয়ে আদালত আইও’র কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে বিচারকের বদান্যতায় কোন রকমে পার পেয়ে যান।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোববার (১৭ জুলাই) এমন ঘটনা ঘটেছে।
কক্সবাজার সিজেএম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছনে। আশেক এলাহী জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার জিআর : ১৯/২০২০ নম্বর মামলাটির গত ২০২০ সালের ২৬ জুন চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়। যার চার্জশীট নম্বর : ১৯০, চকরিয়া থানা।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিলো। চার্জ গঠনের আগে মামলার এজাহার, দাখিলীয় চার্জশীট, জখমের মেডিকেল সনদপত্র, ঘটনাস্থলের মানচিত্র, সাক্ষীদের লিখিত জবানবন্দী সহ সকল ডকুমেন্টস বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী পর্যলোচনা করেন।
শাহজাহান নুরী বলেন, পর্যালোচনায় বিজ্ঞ বিচারক দেখতে পান “আবদুল আজিজ নামক একজন আাসামী তার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে বাড়ি (আঘাত) মেরে ভিকটিম মামুনুর রশীদের ডান হাতের কনুইতে সাধারণ জখম করেন” মর্মে চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে আইও কর্তৃক চার্জশীটের ৪ জন সাক্ষীর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় নেওয়া লিখিত জবানবন্দীতেও অনুরূপ বক্তব্য উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, কিন্তু এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) চকরিয়া থানার এসআই (নিরস্ত্র) আবদুল্লাহ আল মামুন কথিত আবদুল আজিজ কর্তৃক ভিকটিমকে আঘাত করার কথা উল্লেখ থাকলেও সেই আবদুল আজিজকে আসামী হিসাবে চার্জশীটে রাখা হয়নি। আবার এ মামলার ১-৩ নম্বর আসামীর পিতা হিসাবে ‘মৃত’ আবদুল আজিজ নামক একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সিজেএম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, মৃত আবদুল আজিজ কিভাবে ভিকটিমকে আঘাত করল, আবদুল আজিজ নামে কোন আাসামী চার্জশীট ও এজাহারে কেন নেই-তা আদালতের কাছে স্পষ্ট হচ্ছিলনা। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার তার তদন্ত কাজে যথেষ্ট গাফিলতি, চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীন কাজ করেছেন বলে বিজ্ঞ বিচারকের কাছে প্রতীয়মান হয়। যা ন্যায় বিচারকে বিঘ্নিত করবে বলে তিনি পর্যবেক্ষন দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী মামলাটি সেদিন আর চার্জ গঠন না করে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রেফারেন্স দিয়ে স্বশরীরে আদালতে এসে বিষয়টি ব্যাখা দিতে আইও এসআই আবদুল্লাহ আল মামুনকে ১৭ জুলাই আদালতে তলব করেন। তলবের কপি কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের এএসপি, কক্সবাজারের কোর্ট ইন্সপেক্টর ও চকরিয়া থানার ওসি’র নিকট প্রেরণ করা হয়।
এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন চকরিয়া থানা থেকে বদলী হয়ে বর্তমানে পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর থানায় কর্মরত আছেন। সেখান থেকে রোববার (১৭ জুলাই) কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে মৃত ব্যক্তির দ্বারা আঘাত করার বিষয়টি লিখিতভাবে ব্যাখা দিয়ে আদালতের কাছে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সিডিএমসি (ক্রিমিনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) এ সার্ভারে নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যায় তথ্য ইনপুট দিতে গিয়ে এরকম মুদ্রনজনিত ভুল হয়েছে বলে আইও আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁর লিখিত ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন। এটা তার প্রথমবার ভুল হিসাবে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে অধিকতর সতর্ক থাকবেন বলে তিনি আদালতকে জানান।
এ বিষয়ে আদালত তাকে ভর্ৎসনা করেন। ভবিষ্যতে আরো দায়িত্বশীলতা, কাজে আরো মনোযোগী, আরো সতর্কতা অবলম্বন ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া, আদালতে দাখিল করা ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীটটি অধিকতর তদন্ত করে যথাযথ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিজ্ঞ বিচারক আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের আদেশ দেন।