ছগির আহমেদ টুটুল:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর উপর ছোট ছোট আলোচনার মাধ্যমে সহজ ভাষায় একটি কার্যকরী সাজেশন তৈরীর চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
#অপহরন[ধারা-২(খ)]
“অপহরণ” মানে কোন ব্যক্তিকে বলপ্রয়োগ করে অথবা প্রলুব্ধ করে অথবা ফুসলিয়ে অথবা ভুল বুঝিয়ে অথবা ভীতি প্রদর্শন করে কোন স্হান হতে অন্য স্হানে যেতে বাধ্য করাকে বুঝায়।
#নবজাতক শিশু[ধারা:২(চ)]
এখানে নবজাতক শিশু বলতে অনধিক ৪০ দিন বয়সের কোন শিশুকে বোঝানো হবে।
#যৌতুক[ধারা:২(ঞ)]
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-২(ঞ) +যৌতুক নিরোধ আইন,২০১৮ এর ধারা-২(খ) একসাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কনে পক্ষ বর পক্ষের কাছে যৌতুক চায় এবং বর পক্ষ কনে পক্ষের কাছে যৌতুক চায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও উভয় পক্ষ বিবাহের পণ হিসেবে উভয় পক্ষের কাছে যৌতুক দাবী করে। যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন মোতাবেক দেনমোহর,আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া উপহার যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
#শিশু:[ধারা-২(ট)]
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশু বলতে অনধিক ১৬ বছর বয়সের কোন ব্যক্তিকে বুঝায়। আর শিশু আইন,২০১৩ -এ শিশু বলতে অনধিক ১৮ বছর বয়সের কোন ব্যক্তিকে বুঝায়। আবার পারিবারিক সহিংসতা(প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন,২০১০ এর ধারা-২(১৮) অনুযায়ী “শিশু” বলতে ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হবে। শিশুর বয়সের ব্যাপারে সবগুলো আইন এভাবে মিলিয়ে পড়তে হবে। তাহলে একটা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
#দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি[ধারা-৪]
কোন ব্যক্তি যদি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটান কিংবা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন,তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং অনধিক এক লক্ষ অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।[ধারা-৪(১)]
কোন ব্যক্তি যদি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর দৃষ্টিশক্তি অথবা শ্রবণশক্তি অথবা মুখমন্ডল অথবা যৌনাঙ্গ নষ্ট করেন,তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং অনধিক এক লক্ষ অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।[ধারা-৪(২)]
কোন ব্যক্তি যদি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর শরীরের অন্য কোন স্হানে আঘাত করেন,তা হলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১৪ বছর কিন্তু কমপক্ষে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন[ধারা-৪(২)]
যদি কোন ব্যক্তি দহনকারী,ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ কোন শিশু অথবা নারীর উপর নিক্ষেপ করেন কিংবা নিক্ষেপ করার চেষ্টা করেন,উক্ত ব্যক্তির এমন কাজের ফলে সংশ্লিষ্ট শিশু বা নারীর শারীরিক,মানসিক কিংবা অন্য কোন ক্ষতি না হলে,উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৭ বছর কিন্তু কমপক্ষে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।[ধারা-৪(৩)]
এখানে অর্থদন্ড দন্ডিত ব্যক্তির নিকট হতে কিংবা তার বিদ্যমান সম্পদ হতে কিংবা তার মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় রেখে যাওয়া সম্পদ হতে আদায় করা হবে।[ধারা-৪(৪)]
#নারী ও শিশু অপহরনের শাস্তি[ধারা-৭]
যদি কোন ব্যক্তি নারী অথবা শিশুকে অপহরণ করেন, তা হল উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন অথবা কমপক্ষে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
#মুক্তিপণ আদায়ের শাস্তি[ধারা-৮]
যদি কোন ব্যক্তি মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে কোন নারী অথবা শিশুকে আটক করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
#ধর্ষনজনিত কারনে মৃত্যে ইত্যাদির শাস্তি[ধারা-৯]
(১) দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারাতে ধর্ষণ(Rape) এর সংজ্ঞা এবং ৩৭৬ ধারাতে ধর্ষণ এর শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে।আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-৯ এ কোন কোন পরিস্হিতিতে ধর্ষণের শাস্তি কি হবে সেটা আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণের সকল মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় করা হয়ে থাকে। দন্ডবিধির আওতায় এখন আর ধর্ষণের মামলা করা হয় না। দন্ডবিধির আওতায় ধর্ষণের মামলা করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আত্ততায় ধর্ষণ মামলা করাকে আইনের ভাষায় Doctrine of Implied Repeal বলে।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে ধর্ষণের মামলা করার কারন হল এই আইন স্পেশাল আইন। আর স্পেশাল আইনের আত্ততায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
(২) ধর্ষণের মামলা আমলে(Cognizance) নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। এখন সে কথাগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে আলোচনা করার চেষ্টা করব।দন্ডবিধির অধীনে যদি ধর্ষণের মামলা করা হয়ে থাকে তাহলে মামলা আমলে(Cognizance) নিবে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-কে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়।মেট্রোপলিটন এলাকাতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-কে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে কোন ধর্ষণের মামলা হলে সেই মামলা আমলে নিবেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। কোন ম্যাজিস্ট্রেটের এই আইনের অধীনে মামলা আমলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে মামলাটি আসলে সে মামলাটি রেডি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দিবে। তারপর ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার সম্পন্ন করবে।
(৩) দন্ডবিধির ধারা-৩৭৫ এ একটা ব্যতিক্রম বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয়,সেক্ষেত্রে স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করে তাহলে সেটা ধর্ষণ(Rape) হিসেবে গণ্য হবে।এখন কথা হল স্বামী যদি স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তাহলে এই মামলা আমলে(Cognizance) নিবে কে? ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৫৬১ এর উপধারা-১ এ বলা আছে,স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ধর্ষিত হলে এই অপরাধ আমলে নিবেন একমাত্র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মামলা আমলে নিবেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। আর মেট্রোপলিটন এলাকাতে এই অপরাধ আমলে নিবেন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। তাছাড়া অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ধর্ষণের অপরাধ আমলে নিতে পারবে না। এই অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রেও আমরা একটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করব। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৫৬১ এর উপধারা-২ এ বলা আছে,স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ধর্ষণের অপরাধের তদন্ত করবে কমপক্ষে পুলিশ ইন্সপেক্টর পদের কোন পুলিশ অফিসার।তার মানে এস.আই লেভেলের কোন পুলিশ অফিসার এই মামলার তদন্ত করতে পারবে না।
(৪) দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারাতে ধর্ষণ(Rape) এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।এখানে বলা হয়েছে, কোন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সম্মতি ব্যতীত অথবা ভয় দেখিয়ে সম্মতি আদায় করে অথবা অন্যায়ভাবে বুঝিয়ে তার সম্মতি নিয়ে যৌন সহবাস করলে সেটা নারী ধর্ষণ নামে বিবেচিত হবে।নারী ধর্ষণ বলতে নারীর বিনা অনুমতিতে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনসঙ্গম করা বুঝায়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলতে প্রত্যক্ষ আগ্রহের অভাবকে বুৃঝায়। নিদ্রিতা অবস্থায় কোন নারীর সাথে মিলিত হলে সে মিলনকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলন বুঝায়। জড়বুদ্ধি কোন নারীকে তার বুদ্ধির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যৌনসঙ্গম করাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলন বুঝাবে।মৃত্যুর ভয়ে বা আঘাতের ভয়ে সম্মতি দেয়াকে সম্মতি বলা চলে না।
(৫) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ৯ ধারার ব্যাখ্যাতে নারী ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে,কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সঙ্গম করাকে নারী ধর্ষণ বলে। এখানে আরো বলা হয়েছে,কোন পুরুষ যদি বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে, তাহলে সেটা নারী ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
(৬) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারাতে ধর্ষণ এবং ধর্ষণজনিত কারণে শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে।
# নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধিকতর সংশোধন কল্পে ২০২০ সালে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে নারী বা শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়।
#নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে,তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন। দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ(Gang Rape) এর ক্ষেত্রে ও ৯ ধারার উপধারা-২ এর শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
নোটঃ দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ(gang rape) করতে গিয়ে কোন নারী বা শিশুকে মৃত্যু ঘটালে বা আহত করলে প্রত্যেক ধর্ষণকারী একই শাস্তি পাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক ধর্ষণকারীর শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
#নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)(ক) ধারায় বলা হয়েছে,যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন,তাহলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধিকতর সংশোধন কল্পে ২০২০ সালে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে নারী বা শিশু ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়।
#ধারা-৯ এর উপধারা-৫ নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। এই উপধারাটি এই আইনের একটি দুর্বলতা। এখানে বলা হয়েছে,যদি পুলিশ হেফাজতে কোন নারী ধর্ষিতা হন,তাহলে হেফাজতকারীকে ধর্ষণের জন্য সরাসরি দায়ী করা হবে।এবং হেফাজতকারীর ব্যর্থতার জন্য তার শাস্তি হবে অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন পাচ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড। এখানে শাস্তির পরিমাণ কম হয়ে গিয়েছে।
সুপারিশঃ পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় কোন নারী ধর্ষিতা হলে সেটাতো হেফাজতকারীর সবচেয়ে বড় অপরাধ। এই অপরাধের জন্য যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন পরিবর্তন করা হয়,সেজন্য আইন-প্রণেতাগনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তাহলে হেফাজতকারী তার দায়িত্ব পালনে আরো সচেষ্ট হবেন।
#যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির শাস্তি[ধারা-১১]
(১) কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা,মাতা,অভিভাবক অথবা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যদি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীর মৃত্যু ঘটান কিংবা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তারা মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।আর মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
(২) কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা,মাতা,অভিভাবক অথবা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যদি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীর মারাত্মক জখম(grievous hurt)ঘটান,তাহলে তারা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অনধিক ১২ বছর কিন্তু কমপক্ষে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
(৩) কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা,মাতা,অভিভাবক অথবা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যদি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীর সাধারণ জখম(simple hurt)ঘটান, তাহলে তারা অনধিক ৩ বছর কিন্তু কমপক্ষে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
#ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি করার শাস্তি[ধারা-১২]
কোন ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি করলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
#ধর্ষনের ফলে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধান[ধারা-১৩]
ধর্ষণের ফলে কোন শিশু জন্মলাভ করলে উক্ত শিশুকে তার মাতা কিংবা তার মাতৃকুলীয় আত্নীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে।ধর্ষনের ফলে জন্মলাভকারী শিশু পিতা এবং মাতা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবেন।উক্ত শিশুর ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে।ছেলে সন্তান ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণপোষণ পাবেন।মেয়ে সন্তান বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত ভরণপোষণ পাবেন।পঙ্গু সন্তান স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন করা না পর্যন্ত ভরণপোষণ পাবেন।ধর্ষণের ফলে জন্মলাভকারী সন্তানের ভরণপোষণের টাকা সরকার ধর্ষকের নিকট থেকে আদায় করবে।ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে ধর্ষক যে সম্পদের মালিক হবে সেখান থেকে আদায় করা হবে।
#সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা -নিষেধ। [ধারা-১৪]
নারী ও শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে পরিবেশন করা হবে যাতে করে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়।[ধারা-১৪(১)]
যদি কোন ব্যক্তি উপরের বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ডে অথবা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।[ধারা-১৪(২)]
#মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি।[ধারা-১৭]
কোন ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীনে অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা কিংবা অভিযোগ দায়ের করেন,তাহলে উক্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে অনধিক ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।[ধারা-১৭(১)]
কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা-(১) এর অধীনে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন।[ধারা-১৭(২)]
Note: ধারা-১৭(নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন)+CrPC(ধারা-২৫০)+আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার)আইন(ধারা-৬)+দুর্নীতি দমন কমিশন আইন(ধারা-২৮গ)+মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন,২০১২(ধারা-১৫) একসাথে মিলিয়ে পড়তে হবে।এই ধারাগুলোতে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
#অপরাধের তদন্ত[ধারা-১৮]
ক.অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময় পুলিশ কর্তৃক হাতেনাতে ধৃত হলে, তাহার ধৃত হবার পরবর্তী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।
খ.অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময় পুলিশ কর্তৃক হাতেনাতে ধৃত না হলে,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নিকট হতে তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।[ধারা-১৮(১)]
কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে উপ-ধারা(১) অনুযায়ী তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারলে, তদন্তকারী কর্মকর্তা কারণ লিপিবদ্ধ করে অতিরিক্ত ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করবেন।তৎসম্পর্কে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অথবা তদন্তের আদেশ প্রদানকারী ট্রাইব্যুনালকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।[ধারা-১৮(২)]
উপ-ধারা(২) অনুযায়ী তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারলে, তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন না হওয়া সম্পর্কে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অথবা তদন্তের আদেশ প্রদানকারী ট্রাইব্যুনালকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।[ধারা-১৮(৩)]
উপ-ধারা(৩) অনুযায়ী তদন্ত কার্য সম্পন্ন না হওয়া সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অথবা তদন্তের আদেশ প্রদানকারী ট্রাইব্যুনাল উক্ত অপরাধের তদন্তভার অন্য কোন কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করতে পারবেন।
ক.অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময় পুলিশ কর্তৃক হাতেনাতে ধৃত হলে,তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন করবেন।
খ.অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময় পুলিশ কর্তৃক হাতেনাতে ধৃত না হলে,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নিকট হতে তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন করবেন।[ধারা-১৮(৪)]
#বিচার পদ্ধতি[ধারা-২০]
ক.নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর অধীনে কোন অপরাধের বিচার কেবলমাত্র “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ বিচারযোগ্য হবে।[ধারা-২০(১)]
খ.”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ মামলার শুনানী একবার শুরু হলে উহা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা চলবে।।[ধারা-২০(২)]
গ.বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিনের মধ্যে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”
বিচার কাজ সমাপ্ত করবে।[ধারা-২০(৩)]
নোটঃ এখানে কিছু কথা বলা প্রয়োজন।ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯গ ধারা অনুযায়ী কোন দায়রা জজ,অতিরিক্ত দায়রা জজ অথবা যুগ্ম দায়রা জজ বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৩৬০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন।কিন্তু এখানে বলা হয়েছে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” ৮০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। আমরা জানি “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর বিচারক হলেন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক।বিচার কার্য সমাপ্তির সময়সীমা ১৮০ দিন না হয়ে ৩৬০ দিন হওয়া দরকার ছিল।কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ একটি বিশেষ আইন।আর ফৌজদারী কার্যবিধি একটি সাধারণ আইন।বিশেষ আইন আর সাধারণ আইনের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়,তখন বিশেষ আইনে যেটা বলা থাকবে সেটাই বলবৎ হবে।তাই এখানে বিচার কাজ সমাপ্তির সময়সীমা ১৮০ দিন কথাটা সঠিক হবে।
ঘ.”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সমাপ্ত করতে না পারলে,মামলার আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে।আর যদি আসামীকে জামিনে মুক্তি দেয়া না হয় তাহলে ট্রাইব্যুনাল তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবে।[ধারা-২০(৪)]
ঙ.কোন মামলার বিচার কাজ শেষ না করে যদি ট্রাইব্যুনালের বিচারক বদলি হয়ে যায়, তাহলে মামলাটি যে পর্যায়ে ছিল সেখান থেকে পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত বিচারক বিচার কাজ করবেন।দ্বিতীয় কথা হল পূর্ববর্তী বিচারক যে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন, পরবর্তীতে স্থলাভিষিক্ত বিচারকের সে সাক্ষীর সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না।
ব্যতিক্রম-তবে ন্যায় বিচারের স্বার্থে পরবর্তীতে সাক্ষীকে তলব করে পুনরায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।[ধারা-২০(৫)]
চ.কোন ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে অথবা ট্রাইব্যুনালের স্বীয় বিবেচনায়(suo motu) এই আইনের ৯ ধারার(ধর্ষণ) অধীন অপরাধের বিচার কাজ রুদ্ধদ্বার কক্ষে(trial in camera) করতে পারবে।[ধারা-২০(৬)]
ছ.কোন শিশু এই আইনের অধীনে কোন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে বা উক্ত অপরাধের সাক্ষী হলে তার ক্ষেত্রে শিশু আইন,২০১৩ এর বিধান অনুসরণ করতে হবে।[ধারা-২০(৭)]
#ফৌজধারী কার্যবিধির প্রয়োগ[ধারা-২৫]
ক.নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর অধীনে কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে উক্ত আইনের বিধানাবলী অনুসরণ করা হবে।উক্ত আইন যদি কোন বিষয় কাভার না করে তখন ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুসরণ করা হবে।যেমন-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর অধীনে কোন অপরাধের তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে উক্ত আইনের ১৮ ধারাতে বলা হয়েছে।সুতরাং এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুসরণ করা হবে না।[ধারা-২৫(১)]
খ.”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ অভিযোগকারী ব্যক্তির পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন পাবলিক প্রসিকিউটর।অধস্তন আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীকে পাবলিক প্রসিকিউটর বলা হয়।উচ্চ আদালতে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীকে এ্যাটর্নী জেনারলে বলা হয়।উচ্চ আদালত বলতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ-কে বুঝানো হয়।।[ধারা-২৫(২)]
#নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা[ধারা-২৬]
ক.নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য সরকার প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করবে।প্রয়োজনবোধে সরকার একটি জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।ট্রাইব্যুনালের নাম হবে,”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”।[ধারা-২৬(১)]
খ.”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” একজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত হবে।সরকার জেলা ও দায়রা জজগণের মধ্যে থেকে একজনকে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর বিচারক নিয়োগ করবেন।[ধারা-২৬(২)]
গ.একটি জেলার অধস্তন আদালতের প্রধান হলেন জেলা ও দায়রা জজ।সরকার প্রয়োজন মনে করলে জেলা ও দায়রা জজকে তার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে ” এর বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।[ধারা-২৬(৩)]
ঘ.এই ধারা মতে জেলা ও দায়রা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে অন্তর্ভুক্ত করবে।তার মানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।।[ধারা-২৬(৪)]
#নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার[ধারা-২৭]
ক.পুলিশ কর্মকর্তার লিখিত রিপোর্টের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কোন অভিযোগ আমলে নিবেন।তবে সে পুলিশ কর্মকর্তাকে অবশ্যই কমপক্ষে সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার হতে হবে।এছাড়াও সরকারের নিকট থেকে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির লিখিত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” কোন অভিযোগ আমলে নিতে পারে।[ধারা-২৭(১)]
খ.পুলিশ অফিসার অভিযোগকারীর অভিযোগ গ্রহণ না করলে, এক্ষেত্রে অভিযোগকারী হলফনামা সহকারে সরাসরি “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
(১)তারপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে অভিযোগটি অনুসন্ধান(inquiry) করার জন্য কোন জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করবেন।অতঃপর অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগটি অনুসন্ধান করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন।
(২)ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট না হলে অভিযোগটি সরাসরি নাকচ(reject) করে দিবেন।[ধারা-২৭(১ক)]
গ.
(১)পুলিশ অফিসার অভিযোগকারীর অভিযোগ গ্রহণ না করলে, এক্ষেত্রে অভিযোগকারী হলফনামা সহকারে সরাসরি “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
তারপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে অভিযোগটি অনুসন্ধান(inquiry) করার জন্য কোন জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করবেন।অতঃপর অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগটি অনুসন্ধান করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন।রিপোর্ট পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল এই মর্মে সন্তুষ্ট হলেন যে, অভিযোগকারী কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে অথবা সরকারের নিকট হতে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছেন।তখন “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধটি আমলে(cognizance) নিবেন।
(২)পুলিশ অফিসার অভিযোগকারীর অভিযোগ গ্রহণ না করলে, এক্ষেত্রে অভিযোগকারী হলফনামা সহকারে সরাসরি “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল”-এ অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
তারপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে অভিযোগটি অনুসন্ধান(inquiry) করার জন্য কোন জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট অথবা অন্য কোন ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করবেন।অতঃপর অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগটি অনুসন্ধান করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন।রিপোর্ট পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল এই মর্মে সন্তুষ্ট হলেন যে, অভিযোগকারী কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে অথবা সরকারের নিকট হতে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে ব্যর্থ হননি অথবা অভিযোগের সমর্থনে কোন প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি নাকচ(reject) করে দিবেন।[ধারা-২৭(১খ)]
ঘ.”নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেটের অনুসন্ধান(inquiry) রিপোর্ট প্রাপ্তির পর দেখলেন,অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ সম্পর্কে কার্যক্রম গ্রহণের কোন সুপারিশ নেই।তখন ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে কারন উল্লেখপূর্বক স্বেচ্ছায়(suo motu)অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন।[ধারা-২৭(১গ)]
ঙ.নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর অধীন কোন অপরাধের সাথে অন্য আইনের কোন অপরাধ এমনভাবে জড়িত থাকে।এক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের স্বার্থে উভয় অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনাল একসাথে করতে পারবে।[ধারা-২৭(৩)]
উদাহরণ-শামীম নামে একজন ব্যক্তি ফাতেমা বেগমকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আটক করে।অতঃপর ফাতেমা বেগমের পরিবার শামীম নামক ব্যক্তিকে মুক্তিপণ না দিলে সে ধারালো ছুরি দিয়ে ফাতেমা বেগমকে আঘাত করে।এক্ষেত্রে শামীমকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ৮ ধারা(মুক্তিপণ আদায়ের শাস্তি)+দন্ডবিধির ৩২৬ ধারা(মারাত্মক আঘাত) মোতাবেক চার্জ গঠন করে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।এখন কথা হলো পেনাল কোডের আওতায় সংঘটিত কোন অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” এর আছে কিনা?
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ২৭(৩) ধারা মোতাবেক ন্যায় বিচারের স্বার্থে অন্য আইনের কোন অপরাধ উক্ত আইনের কোন অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে ট্রাইব্যুনাল বিচার করতে পারবে।
#আপীল[ধারা-২৮]
“নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল” কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ অথবা রায় অথবা আরোপিত দন্ড দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি(aggrieved person) উক্ত আদেশ অথবা রায় অথবা দন্ডাদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারবেন।
নোটঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ২৮ ধারায় আপীল দায়েরের সময়সীমার কথা বলা হয়েছে।এখানে আপীল নিষ্পত্তির সময়সীমার কথা বলা হয়নি।যেহেতু এখানে আপীল নিষ্পত্তির সময়সীমার কথা বলা হয়নি,সেহেতু এক্ষেত্রে উক্ত আইনের ২৫ ধারা মোতাবেক ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানাবলী অনুসরণ করা হবে।
ক.ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪২ক ধারায় বলা হয়েছে,আপিলকারী আপীল দায়েরের পর আদালত রেসপন্ডেন্ট বরাবর নোটিস জারী করবে।নোটিস জারীর ৯০ দিনের মধ্যে আপীল আদালত আপীল নিষ্পত্তি করবে।[ধারা-৪৪২ক(১)]
খ.সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আদালতের কর্মের দিনগুলো গণনা করা হবে।[ধারা-৪৪২ক(৩)]
#ধারা-২৯ঃমৃত্যুদন্ড অনুমোদন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কাউকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলে অত্র মামলার নথিপত্র ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৩৭৪ এর বিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে পাঠাতে হবে। রায় ঘোষণার ৩ দিনের মধ্যে [Cr.R.O এর বিধি ১১৮ অনুযায়ী] হাইকোর্ট বিভাগে মামলার নথিপত্র পাঠাতে হবে।হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন ছাড়া মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবে না।
#ধারা-৩১ঃনিরাপত্তামূলক হেফাজত।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনাল উক্ত নারী ও শিশুকে কারাগারের বাহিরে সরকারী কর্তৃপক্ষের হেফাজতে বা ট্রাইব্যুনালের বিবেচনায় অন্য কোন ব্যক্তি বা সংস্হার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিতে পারবে।এই আইনের ২০(৮) ধারায় বলা হয়েছে,কোন নারী বা শিশুকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল উক্ত শিশু বা নারীর কল্যাণ ও স্বার্থ বিবেচনা করবেন।
#ধারা-৩১কঃট্রাইব্যুনালের জবাবদিহিতা।
ক.কোন মামলা ধারা-২০(৩) এর উল্লেখিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হবার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালকে এর কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রীম কোর্টের নিকট দাখিল করতে হবে।যার একটি অনুলিপি সরকারের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
খ.একই ভাবে কোন মামলা ধারা-২০(৩) এর উল্লেখিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হবার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে এর কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করতে হবে। যার একটি অনুলিপি সুপ্রীম কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
#ধারা-৩২ক:অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড(ডিএনএ) পরীক্ষা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২০ এর মাধ্যমে ৩২ক ধারা সংযোজন করে নতুন একটি বিষয় যোগ করা হয়েছে। আগে শুধুমাত্র ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হত। এখন থেকে ধর্ষিতা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি দুজনেরই মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। ডিএনএ টেস্টে তাদের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ধর্ষিতা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি দুজনেরই ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড(ডিএনএ) আইন,২০১৪ এর বিধান অনুযায়ী ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
#নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের উপর একটি সামগ্রিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখক: ছগির আহমেদ টুটুল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিলেট।