ইমাম খাইর : কক্সবাজারের বনভূমির অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৫ এর বিচারক আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ।
এ বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) নিজের আদালতে মামলাটি করেছেন তিনি। যার মিস মামলা নং-০১/২০২২।
বনভূমি দখলবাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা, সুনির্দিষ্ট ঘটনা বর্ণনা এবং অপরাধ বিষয়ে পরিপূর্ণ প্রতিবেদন আগামী ৩১ আগষ্টের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন বিচারক।
আদেশের কপি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ২০ জুলাই স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক দৈনন্দিনের প্রতিবেদন “দক্ষিণ বন বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে উখিয়া রেঞ্জ। বনভূমি ধ্বস করে চলছে স্থাপনা নির্মাণ। টাকায় ম্যানেজ বন বিভাগ, নেই অভিযান” আদালতের নজরে আসে। এরপর স্বপ্রণোদিত মামলাটি করেন বিচারক।
মামলার আদেশে বলা হয়েছে, “বনভূমি জীব বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। একটি এলাকায় বনভূমি কমে গেলে সেখানে মরুকরণ, ভূমিধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়ে যায়। দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়। দেশের মোট বনভূমির একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো কক্সবাজার।
কক্সবাজারে প্রতিদিন বনভূমির জায়গা দখল করে বন উজাড় হচ্ছে। বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত এবং রক্ষিত বনে কোনরূপ অনধিকার প্রবেশ করে বনের কোন ক্ষতি করা যাবে না। এর মধ্যে প্রতিবছরই বন উজাড় হচ্ছে। বনের জমিতে স্থাপনা গড়ে তোলা সম্পূর্ণ বেআইনী। বন রক্ষায় সবার আগে সরকার তথা বন বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।
কক্সবাজার জেলার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন সদর ও ওয়ালা বিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি/গণ/গোষ্ঠী বনভূমি এবং গাছগাছালি ধ্বংস এবং উজাড় করে উক্ত এলাকাকে সংকটাপন্ন এলাকায় পরিণত করছে যা কক্সবাজার তথা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এমতাবস্থায়, পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন সদর ও ওয়ালা বিটসহ একই রেঞ্জের অন্যান্য বিট বন বিভাগের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে চাষাবাদ, পাকা ভবন নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান, পিএফ জমির বাগান উজাড় করে বহুতল ভবন নির্মাণ, বনভূমির জায়গা দখল পূর্বক তা বিক্রয় করে উল্লিখিত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি/গণ/গোষ্ঠী বন বিভাগের নির্দিষ্ট কোন জায়গায় কি রূপ অপরাধ করেছে/করছে এবং এরূপ অপরাধ সংঘটনে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী জড়িত রয়েছে কি না তদন্ত করা একান্ত আবশ্যক।
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৯০ (১)(গ) মতে, অত্রাদালত উক্ত ঘটনা স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেয়ার এখতিয়ার রাখেন।”
এদিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, পরিবেশ ও বন রক্ষায় একজন বিচারকের স্বপ্রণোদিত এমন পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে বনভূমির জায়গা দখল এবং দেদারসে বন উজাড় বন্ধ করা যাবে।
এতে একদিকে যেমন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে, অন্যদিকে এ ধরণের অপরাধ করে নিস্তার পাওয়ার সুযোগ যে নেই বনভূমির অবৈধ দখলদারের কাছে আদালতের কোঠর বার্তা পৌঁছুবে বলেও মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।