চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা বাগান মালিক ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে চা শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা ৫০০ টাকা করার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের নিজস্ব আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে সোমবার (২২ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস এ নোটিশ পাঠান।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), চা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ন্যূতম মজুরি বোর্ডের সচিবকে লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে নোটিশে। তা না হলে এ বিষয়ে আইনি প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমান ও চঞ্চল কুমার বিশ্বাস লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করলে চা বাগান মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ২৫ টাকা মজুরি বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, একটি অংশ তা মানলেও শ্রমিকদের আরেকটি অংশ ক্ষোভে আর অভিমানে তা মানতে রাজি হননি। তারা বলেছেন ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার বদলে তারা পুরোনো মজুরিতেই কাজ করবেন।
‘কিন্তু আমাদের দেশ এখন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাই একটি উন্নত ও আধুনিক সমাজে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য দিনে কমপক্ষে ৫০০ টাকা না হলেই নয়। তাই আমরা চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার জন্য একজন শ্রমিকের দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছি।’
দেশের প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার চা শ্রমিক প্রতিদিন মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে ১৬৭টি নিবন্ধিত বাগানে কাজ করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কম, তা ছাড়া বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। এটা হতে পারে না। এ কারণে নোটিশে দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের নিজস্ব আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি।
এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চা শ্রমিকদের বাসস্থান সাংবিধানিক অধিকার। তাদের অবশ্যই ভূমি থাকবে। এছাড়া বর্তমান বাজারমূল্যে চা-শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হয় তা অমানবিক। এ সব বিবেচনায় আদালতে নোটিশ পাঠিয়েছি।
গত ৯ অগাস্ট থেকে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন চা বাগানগুলোর প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। সেসময় প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করলেও ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন।
এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা সমাধান হয় না। শেষ পর্যন্ত শনিবার (২০ আগস্ট) তাদের মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। তবে ১৪৫ টাকা মজুরিতে শ্রমিকদের একটি অংশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বেশিরভাগ শ্রমিক তাতে রাজি হননি।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মজুরি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকরা পুরোনো ১২০ টাকা মজুরিতেই আপাতত কাজে ফিরেছেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে।