খুলনা ওয়াসার এমডির দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট
হাইকোর্ট; রিট (প্রতীকী ছবি)

দেশের সব আইনজীবী সমিতিকে বিধিবদ্ধ অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রিট

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দেশের সকল জেলা আইনজীবী সমিতিগুলোকে বিধিবদ্ধ অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট রিট দায়ের করা হয়েছে। একইসাথে সুপ্রিম কোর্ট বারের সংবিধান যেন নিবন্ধন করা হয় রিটে সে নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ আবু তালেব এ রিট দায়ের করেন। (রিট পিটিশন নং ৯৯২৯/২০২২ : অ্যাডভোকেট মোঃ আবু তালেব বনাম বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অন্যান্য।)

রিটে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে অবকাশের আগে তাড়াহুড়ো এড়াতে আগামী অক্টোবরে শুনানি হবে মর্মে মৌখিক আদেশ দেন।

রিটকারী আইনজীবী আবু তালেব ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অ্যাডভোকেট আবু তালেব জানান, রিটের মূল প্রার্থনা বা চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল যাতে আইনের বিধান প্রতিপালনকল্পে সরকারের অর্থাৎ আইন মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশের অন্যান্য সকল লোকাল বার এসোসিয়েশনগুলোকে বিধি দ্বারা এসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং একইসাথে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বারের সংবিধান যাতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দ্বারা নিবন্ধন করা হয়।

রিটে আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এর ৩৯ ও ৪০ অনুচ্ছেদে বর্নিত আছে যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অন্যান্য সকল আইনজীবী সমিতিকে বিধি দ্বারা এসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন (May)। আইনটি ইংরেজিতে। এরকম আইনে যখন ‘May’ শব্দটি থাকে তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কোন কাজে সাধারণত বাধ্য করা যায় না। অর্থাৎ ‘may’ কে ‘shall’ করা যায় না। কিন্তু ‘General Clauses Act’ ও ‘Interpretations of Statutes’ পর্যালোচনা করে ‘May’ ও ‘Shall’ কে বিবেচনায় নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কখনও ‘May’ শব্দটি ‘Shall’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, বর্তমান ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট হলো উক্ত ১৯৭২ সনের মূল আইনটি বলে দিয়েছে যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দেশের সকল বিজ্ঞ আইনজীবীদের কল্যানে কাজ করবে। এখানে ‘Shall’ শব্দটি আছে। ১৯৭২ সনের উক্ত আইনটির মূল উদ্দেশ্যও ছিলো তাই। কারণ, বিজ্ঞ আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করতে না পারলে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কোন অর্থই ছিলো না।

তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতিগুলো হলো বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত প্রাণকেন্দ্র। এখানে আমাদের পেশাগত উন্নতি ও আর্থ-সামাজিক সকল বিষয় নির্ধারিত হয়। সেটি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার ২০১২ সনে ১৯৭২ সনের মূল আইনটি সংশোধন করে বেশ কিছু রুল করার বিষয়ে ৪০ অনুচ্ছেদে বিধান সংযুক্ত করেন। তার মধ্যে আইনজীবী সমিতিগুলোর আইনগত স্বীকৃতি অন্যতম যা ৪০(ইউ) তে উল্লেখ আছে।

অ্যাডভোকেট আবু তালেব আরো বলেন, আইন প্রণেতাগণ এ কথা মাথায় রেখে আইনে এ বিধান রেখেছিলেন ও সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজন করেছেন যাতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও আইনজীবী সমিতিগুলো একে অপরের সহায়ক হতে পারে। কিন্তু মূল আইন পাশের পরে ৫০ বছর আর ২০১২ সনের সংশোধনীর পরে ১০ বছর কেটে গেলেও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এ বিষয়ে রুল করার কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে আমি গত এপ্রিল, ২০২২-এ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও আইন মন্ত্রণালয়কে এটা করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। কিন্তু ওনারা তা করেননি।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সংবিধান কেন নিবন্ধন করা প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিন যত এগুচ্ছে আমরা তত ‘ক্রিটিকাল’ হচ্ছি। কিছু বিষয়ে ‘ক্রিটিকাল’ হওয়া খারাপ কিছু না। এই যেমন, আমি হাতের করে গুনে গুনে হিসাব নিতে চাই যে, আমার প্রিয় সুপ্রীম কোর্ট বারের টাকা- যেখানে আমার প্রত্যক্ষ ‘কনট্রিবিউশন’ আছে সেটার ‘ফরমাল অডিট’ হয় কিনা অথবা ২০২২-২৩ সনের নির্বাচন নিয়ে সেসময়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হলো সেটা সুপ্রীম কোর্ট বারের রেজিষ্ট্রেশন থাকলে এড়ানো যেতো কিনা-এসব বিষয়।

অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন, উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। যেত। যে আইনে নিবন্ধন হতো সে আইন দ্বারা নির্ধারিত হত। আর ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটা কিংবা নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা দায়িত্ব নেবেন কিনা। আর না নিলে কে হাল ধরবেন বারের। অন্যান্য সকল বারের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন আসে।

আইনজীবী সমিতির রেজিস্ট্রেশন প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত একটি ‘প্রাইভেট বডি’। আর শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হকের আমল থেকে শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান দেশের আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন মেইনটেইনেবল। যেমনটা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ‘Accord’ কেসে মেইনটেইনেবল বলে গণ্য করা হয়েছিলো। এক্ষেত্রেও আমি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনকে কাজটি করতে অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ করেছিলাম। কিন্তু করা হয়নি।