মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : সরকারি খরচে আইনি সহায়তা পাওয়ার বিষয়টা অনেকে এখনো জানেন না। অথচ গরীব, অসহায়, হতদরিদ্র, অক্ষম, অবস্থাপন্ন, অস্বচ্ছল, নির্যাতিত নারী সহ অনেকেই অর্থের অভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারছেন না। এসব আইনি সহায়তা বঞ্চিত মানুষকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইনিসেবা দিতে সরকারের অনবদ্য সৃষ্টি লিগ্যাল এইড। হত দরিদ্র মানুষকে লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে আইনি সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে মসজিদের ইমাম, খতিব সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা তৃণমূল পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
কক্সবাজারের সম্মানিত ইমামদের সাথে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সরকারি খরচে আইনি সেবার প্রচার প্রচারণা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।
গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার জেলা জজ আদালত ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফাহমিদা বেগম, কক্সবাজার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইমাম সমিতির সভাপতি কাজী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী, কক্সবাজার বদরমোকাম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল খালেক নিজামী, তাহেরিয়া তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ শাহাদাত হোছাইন, কক্সবাজার ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এর ফিল্ড সুপারভাইজার মাওলানা আবুল ফয়েজ, আলিফ লাম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ আরিফ উল্লাহ, কক্সবাজার দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা জাহেদুর রহমান সহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবগণ উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি মসজিদে জুমার নামাজ, ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও বয়ান চলাকালে লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে আইনি সহায়তার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধারার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খতিব ও ইমাম সাহেবেরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অতি সহজে এ কাজটি করতে পারেন। যা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এত সহজে করা যায়না। কারণ মসজিদের খতিব, ইমাম সহ দায়িত্বশীলদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের অসাধারণ সৃষ্টি ‘লিগ্যাল এইড’ কার্যক্রম মডেল হিসাবে নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন অনুকরণ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি আরো বলেন, সকল ভাল, সুন্দর ও গঠনমূলক কাজের সাথে মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবেরা যুক্ত রয়েছেন। শিষ্টাচার ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ পরিশুদ্ধ সমাজ বির্নিমানে মসজিদের খতিব ও ইমামেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ঠিক একইভাবে লিগ্যাল এইড এর সুযোগ সুবিধার প্রচারণাও একটি উত্তম কাজ। তিনি এ বিষয়ে মসজিদের মুসল্লী ও আমজনতাকে অবহিত করার জন্য খতিব ও ইমামদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আরো বলেন, লিগ্যাল এইড অফিস শুধু বিনামূল্যে অস্বচ্ছল, অসহায়দের মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেনা। এডিআর পদ্ধতিতে পক্ষসমূহের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করে থাকে। এতে, একদিকে, বিরোধীয় পক্ষ সমূহ মামলার বিভিন্ন ঝামেলা, হয়রানি ও জটিলতা থেকে রেহাই পায়, অন্যদিকে, আদালতেও মামলার জট কিছুটা হলেও কমে যায়। পক্ষ সমূহের মধ্যে সন্তোষজনক সমঝোতা হওয়ায় তাদের মধ্যে রেষারেষি ও ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়।
মতবিনিময় সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফাহমিদা বেগম বলেন, লিগ্যাল এইড এর সুযোগ সুবিধার কথা অনেকের আগে জানা ছিলনা। লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে সমাজের সর্বস্থরের মানুষের জন্য আইনি সেবা প্রদানে খতিব ও ইমামদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের খতিব, ইমামেরা মাদক, নারী নির্যাতন, জঙ্গীবাদ সহ সকল অপকর্ম থেকে মানুষকে দূরে থাকার আহবান জানান সবসময়। সৎ ও ন্যায়ের পথে চলতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। লিগ্যাল এইডও ঠিক তেমন একটা ভাল কাজ। যেটার বিষয়ে মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবেরা সহজে নিজ নিজ মসজিদে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেন। লিগ্যাল এইড এর প্রচার প্রচারণার বিষয়ে তৎপর থাকার জন্য ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এর উপপরিচালক খতিব ও ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় খতিব ও ইমামগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, সমঝোতা ও পরস্পর বুঝাপড়ার মাধ্যমে যেকোন বিরোধ, দ্বন্দ্ব, জটিলতা নিষ্পত্তি করা ইসলামের মহান শিক্ষা। আর অস্বচ্ছল, অসহায় মানুষকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া নিঃসন্দেহে মহৎ ও পূণ্যের কাজ। সরকারের লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে ইমাম, খতিবগণ সাধুবাদ জানিয়ে এর প্রচার প্রচারণায় তারা সরাসরি সম্পৃক্ত হবেন বলে জানান।
মতবিনিময় সভার শুরুতে পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের প্রধান সহকারী মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এর ব্যবস্থাপনায় লিগ্যাল এইড বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি’র তত্ত্বাবধায়নে লিগ্যাল এইড অফিসের কাঠামো পরিচালনা, সেবা ও সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়।
মতবিনিময় সভায় কক্সবাজারের খতিব ও ইমামদের মধ্যে, হাফেজ মাওলানা ছালামত উল্লাহ, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা মফিজুর রহমান, মাওলানা রুহুল আশরাফ রমজান, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, মাওলানা মোঃ ইসমাইল আনসারী, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা দিদারুল ইসলাম, মাওলানা মোঃ রুহুল মতিন, মাওলানা মোঃ ছৈয়দ আলম, মাওলানা মোঃ মনিরুল ইসলাম, মাওলানা আজিজুল হক সিদ্দিকী, মাওলানা নুরুল আলম হেলালী, মাওলানা ক্বারী মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মাওলানা নুর মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।