মো. কামাল হোসেন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদ অনুসারে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে।
অর্থাৎ এদেশের একজন নাগরিক আইনে নির্ধারিত শর্তে যেকোন ধরণের পেশা গ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশ বর্তমান বাস্তবতায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে সরকারি চাকরি। সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা, সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা, চাকরি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা সবাই সরকারি চাকরি পেতে আগ্রহী। কিন্তু সেই সোনার হরিণ সরকারি পাওয়া খুবই কঠিন যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাওয়া যায়। তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই যে চাকরি নিশ্চিত তা নয়, চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন কি
সাধারণত চাকুরী, পাসপোর্ট, লাইসেন্স বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আবেদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যাদি সঠিক আছে কিনা তা পুলিশ কর্তৃক যাচাই করাকে ভেরিফিকেশন বা সত্যতা প্রতিপাদন বলে। চাকরির ভেরিফিকেশন এ অন্যান্য তথ্যাদির সাথে যেসব তথ্য যাচাই করা হয় তা হল: প্রার্থী ফৌজদারি, রাজনৈতিক, বা অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত, গ্রেফতার, বা দন্ডিত এবং নজরবন্দি বা কোনো বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা হতে বহিঃষ্কার হয়ে থাকলে তার তথ্য, প্রার্থী কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বা নৈতিক স্খলনের রেকর্ড রয়েছে কিনা? প্রার্থী কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী বা নাশকতামূলক কার্যকলাপে জড়িত আছেন/ছিলেন কি না?
মামলায় অভিযুক্ত হলে চাকরি হবে কি না?
আমাদের দেশের আইনে সকল মামলাকে প্রাথমিক ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা: ফৌজদারি মামলা ও দেওয়ানী মামলা। ব্যতিক্রম ছাড়া দেওয়ানী মামলা চাকরির জন্য কোন বাধা নয়। অর্থাৎ দেওয়ানী মামলা থাকলে চাকরি হতে সাধারণত কোন বাধা নেই।
কোন মামলা চাকুরীর পথে বাধা?
আমাদের দেশে ফৌজদারী মামলাই হচ্ছে চাকুরীর জন্য প্রধান বাধা। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় সেসব মামলাকে যে মামলা দায়ের হয় অপরাধ বৃত্তির বিচারের স্বার্থে। যেমন: চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি, অপহরণ, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধ সমূহ।
ফৌজদারি মামলা কেন চাকরিতে বাধা?
আইনের একটি সাধারণ নিয়ম হলো- সাক্ষ্য-প্রমাণে দোষী ঘোষিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব আসামিই নির্দোষ। আইনগত ভাবে সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে চাকুরীতে মামলার কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বর্তমানে ভেরফিকেশন রিপোর্টে মামলা আছে মর্মে পুলিশ কর্তৃক রিপোর্ট প্রদান করা হলে, কর্তৃপক্ষ মামলা ও অপরাধের ধরণ, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রস্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিয়োগদানের জটিলতা ও শূণ্যপদে পুণঃ নিয়োগ এবং আর্থিক অপচয় রোধের কথা চিন্তা করে মামলা জড়িত ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থী নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করে। সরকার সাধারণত একজন যোগ্য প্রার্থীকে সরকারের কর্মে নিয়োগ প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলায় সাজা প্রাপ্ত বা অভিযুক্ত একজন প্রার্থী যোগ্য বিবেচিত হন না কেননা তিনি নৈতিক স্খলনে অভিযুক্ত।
এছাড়াও সরকারি চাকরি আইন এর ৪২ ধারা অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা ১ (এক) বৎসর মেয়াদের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দণ্ডিত হলে, উক্ত দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি হতে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন।
সুতরাং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চাকরি প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ কেননা উক্ত মামলায় তিনি এক বছরের বেশি সাজা প্রাপ্ত হলে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করতে হবে।
এছাড়াও রাষ্ট্রবিরোধী বা নাশকতামূলক কর্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিকে সরকারি দায়িত্ব প্রদান রাষ্ট্রের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিবেচনায় সাধারণত ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বা সাজা প্রাপ্ত প্রার্থীকে চাকরিতে বিবেচনা করা হয় না।
মামলা নিষ্পত্তি হলে চাকরি হবে কি না?
ফৌজদারী মামলা মূলত ২ ভাবে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে যেমন,
অব্যহতির মাধ্যমে: দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় অব্যাহতি পেলে চাকুরীতে কোন সমস্যা হবে না। অর্থাৎ মামলায় অব্যাহতি পেলে চাকরিতে পেতে কোন ধরনের সমস্যা নেই।
রায়ের মাধ্যমে : আদালত সাধারণত দুই ধরণের রায় ঘোষণা করেন, খালাস অথবা সাজা। মামলায় খালাস পেলে চাকরি পেতে কোন ধরনের সমস্যা নেই। অন্যদিকে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দন্ড পেলে সাধারণত সরকারি চাকরি হয় না। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার সুযোগ থাকে। আপিলের রায়ের উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে।
মিথ্যা রিপোর্টে চাকরী না পেলে প্রতিকার
আপনার বিরুদ্ধে মামলা না থাকার পরও মামলা জড়িত উল্লেখ করে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দেয়া হয় অথবা খালাস বা অব্যাহতি পাওয়ার পরেও আপনাকে অভিযুক্ত উল্লেখ করা হয় তাহলে আপনি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সার্ভিস ম্যাটার মামলায় অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন।
লেখক : উপ ব্যবস্থাপক- আইন (অতিরিক্ত দায়িত্ব), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (বিজিডিসিএল), কুমিল্লা।