দীপজয় বড়ুয়া : একটি মামলায় যদি কোন ব্যক্তি কোন ঘটনার অস্তিত্ব দাবি করে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার চায়, তখন উক্ত ঘটনার অস্তিত্বের সত্যতা বিচারের জন্য প্রমাণের প্রয়োজন হয়, আর তা প্রমাণ করার দায়িত্ব বা ভারকে প্রমাণের ভার বলা হয়।
প্রমাণের ভার (Burden of Proof)
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে Burden of Proof বা প্রমাণের দায়িত্ব সম্পর্কীয় বিধানাবলী একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা হতে ১১৪ ধারা পর্যন্ত এই সকল বিধিগুলি সন্নিবেশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মোকদ্দমায় কোন বিষয় প্রমাণের ভার কার উপর বর্তায়, উল্লেখিত ধারাগুলির মাধ্যমে এই সম্পর্কীয় বিধানাবলী আলোচিত হয়েছে।
উদাহরণ: সুকেশ একটি জমির জন্য ইরফানের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে। জমিটি ইরফানের দখলে আছে। সুকেশ দাবি করে যে, ইরফানের গাজী সোহান সাহেব উইল করে ঐ জমি সুকেশকে দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দাবিকৃত বিষয়ের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি পেশ করল। আর এটিই হলো প্রমাণের দায়িত্ব।
প্রমাণের দায়িত্ব
কোনো মামলায় বাদীপক্ষ এবং বিবাদী পক্ষ আদালতে উপস্থিত হয়, এমন একটি ঘটনার সত্যতা বা অস্তিত্ব প্রমাণ করতে, যা বিবাদী পক্ষের উপর অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন জন্মায় বিবাদী পক্ষ কি তার নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দিবে নাকি বাদি পক্ষ তাদের আনা অভিযোগ প্রমাণ করবে?
আইনে বলা আছে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির উপর আনিত অভিযোগ প্রমাণ না হয় ততক্ষণ সে নির্দোষ। আইনের ভাষ্য মতে, তাহলে বিবাদীকে আর তার নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দিতে হচ্ছে না? না ঠিক তা নয়, প্রথম অবস্থায় বিবাদীকে তার নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে না অর্থাৎ, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব বাদী পক্ষের।
যখন বাদী পক্ষ কোন তথ্য, প্রমাণ বা সাক্ষ্য আদালতে পেশ করবে তখন বিবাদী পক্ষ যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চায় তাহলে বাদী পক্ষের পেশকৃত তথ্য-প্রমাণাদির খণ্ডন মূলক অপর কোন তথ্য, প্রমাণ বা সাক্ষ্য আদালতে পেশ করতে হবে। অর্থাৎ তখন তার উপর প্রমাণের ভার বর্তাবে।
প্রমাণ করার ভার কথাটিকে আইন অনুযায়ী দুইভাবে ব্যবহার করা যায়, তথা:
• কোন দাবী প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব।
• প্রমাণ উপস্থাপনের দায়িত্ব।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যখন বাদি পক্ষ বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে কোন তথ্য, প্রমাণ বা সাক্ষ্য পেশ করবে তখন প্রমাণের ভার বিবাদী পক্ষের উপর বর্তাবে উক্ত তথ্য, প্রমাণ বা সাক্ষ্যের অস্বীকৃতি জানানোর জন্য। কিন্তু প্রথম অবস্থায় প্রমাণের ভার বাদী পক্ষের উপর ন্যস্ত থাকে, তাই বলা যায় যে, কোন দাবি প্রতিষ্ঠা করার ভার এক পক্ষ থেকে অপর পক্ষের স্থান পরিবর্তন করতে থাকে।
সাক্ষ্য উপস্থাপনের দায়িত্ব সর্বদা এক পক্ষের উপর থাকে মামলার বিচারের শেষ পর্যন্ত মামলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি তার দাবি অনুযায়ী অন্যের বিরুদ্ধে আদালতের রায় কামনা করেন তাহলে উক্ত দাবীকৃত বিষয়ে অস্তিত্ব তাকেই প্রমাণ করতে হয় এটি হলো প্রমাণের দায়িত্ব।
[30 DLR (SC) 41 Ajufannessa Vs. Safar Miah] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারায় বলা হয়েছে যে, যিনি কোন বিষয়ের অস্তিত্বের দাবি করে তার উপর নির্ভরশীল কোন আইনগত অধিকার বা দায় সম্পর্কে আদালতের রায় পেতে ইচ্ছা করেন তিনি সেই বিষয়ের অস্তিত্ব অবশ্যই প্রমাণ করবেন।”
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১০২ ধারা অনুযায়ী যে পক্ষের উপর প্রমাণ করার প্রাথমিক দায়িত্ব বর্তায়, সে তার উপর আরোপিত বিষয়াবলী প্রমাণ করে তার স্বপক্ষে ক্ষেত্র রচনা করতে পারে; তবে পরবর্তী পর্যায়ে প্রমাণ করার দায়িত্ব অন্য পক্ষের উপর বর্তায়। অত্র ধারায় প্রমাণের দায়িত্ব নির্ধারণের পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যক্ত করা হয়েছে।
Burden of Proof এবং Onus of proof এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি যার উপর ন্যস্ত তাকেই প্রমাণ করতে হবে, এর স্থান পরিবর্তন করা যায় না। পক্ষান্তরে শেষোক্তটি একপক্ষের উপর হতে অপর পক্ষের উপর স্থানান্তরিত হতে পারে। সাক্ষ্যের বিকাশে প্রমাণের দায়িত্ব স্থান পরিবর্তনের অবিরাম গতি রয়েছে।
[34 DLR (A1) 61] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “যে লোক দাবি করেন যে, সম্পত্তির প্রকৃত মালিক তিনি, তাকেই সম্পত্তি যার ভোগ-দখলে আছে তিনিই উহার ক্রেতা এবং পূর্বে ধারণা খণ্ডন করে স্বীয় দাবি প্রমাণিত করতে হবে।”
সাক্ষ্য আইনের ১০৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন লোক নির্দিষ্ট বিষয়ে অস্তিত্ব আদালতে গ্রহণীয় করতে চায়, তখন নির্দিষ্ট বিষয় প্রমাণের দায়িত্বটি ঐ লোকের উপর ন্যস্ত হয়। মূলত এই ধারায় কোন লোকের উপর একটি বিশেষ বিষয় প্রমাণ করার দায়িত্ব অর্পণের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি অপরাধী একটি নির্দিষ্ট বিষয় যেমন- অপরাধ সংঘটনের সময় অন্যত্র অবস্থান করেছিল বলে ওজর করলে উক্ত ওজর অপরাধীকে প্রমাণ করতে হবে। আর যদি বাদী অপরাধীর স্বীকারোক্তিমূলক বিষয় দ্বারা মোকদ্দমা প্রমাণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে তাকে ঐ বিষয় প্রমাণ করতে হবে।
[1 BLD 1981 (AD) 141 Abdul Jalil Vs. Durjon Ali] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “পক্ষ করা হয় নাই এরূপ লোকদের অগ্রক্রয়ের মোকদ্দমা করার কোন অধিকার নাই, তা প্রমাণের দায়িত্ব অগ্রক্রয়ের আবেদনকারীর।”
সাক্ষ্য আইনের ১০৪ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অন্য কোন বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে চাইলে তা গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রমাণের প্রয়োজন হলে যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক তাকে উক্ত বিষয়ে প্রমাণ করতে হবে।
সহ-উত্তরাধিকারীকে দখলচ্যুত করার দাবি যে উত্থাপন করে প্রমাণের ভার তার উপর বর্তায়। বিরুদ্ধ দখলের দ্বারা সহ-উত্তরাধিকারী বৈধ স্বত্ব বিচ্যুত করার দাবিদার দখলচ্যুতি প্রমাণ করতে হবে।
সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারা অনুযায়ী ধারা মোতাবেক কোন অপরাধে কোন ব্যক্তি অভিুক্ত হলে যদি সে তার অপরাধ সম্পর্কিত কাজটি দন্ডবিধিতে বর্ণিত কোন সাধারণ অথবা বিশেষ ব্যতিক্রমের মধ্যে আনতে চায় তাহলে সেই বিষয়ে কোন অবস্থার অস্তিত্ব প্রমানের দায়িত্ব উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর বর্তায়।
[40 DLR(AD) 83 page Md. Abdul Majid Vs the State] মামলার সিদ্ধান্তে মহামান্য আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেন যে, “সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারায় যে সকল পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকার কারণে অপরাধির মামলা বিশেষ বা সাধারণ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে তা প্রমাণের ভার সেই অপরাধির উপর পড়ে।”
সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, মামলায় যে পক্ষ অভিযোগের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশেষ অবগত তার উপরই তা প্রমাণ করার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। বিশেষভাবে অবগত বলতে বুঝায় যে, যখন বিচার্য বিষয় সম্পর্কে অপরাধী নির্দিষ্টভাবে অভিযোগকৃত কার্য বিশেষভাবে অবগত, তখন তা প্রমাণের দায়িত্ব তার উপরই ন্যস্ত থাকে।
[15 DLR 615 Momen Mondal Vs. The State] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারার নীতি খুবই সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করতে হয়। ফরিয়াদি পক্ষের প্রমাণের ব্যর্থতার ঘাটতি অপরাধীর উপর পড়তে দেয়া যায় না। অপরাধীর অপরাধ দণ্ডবিধির ব্যতিক্রমের অধীনে পড়ে এরূপ অবস্থা প্রমাণের দায়িত্ব অপরাধীর।”
সাক্ষ্য আইনের ১০৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন লোক জীবিত না মৃত, তা বিচার্য বিষয় এবং দেখানো হয় যে, সে ৩০ বছরের মধ্যে জীবিত ছিল, তবে তার মৃত্যু প্রমাণ করার দায়িত্ব সেই লোকের, যে তাকে বর্তমানে মৃত বলে দাবি করে।
এই ধারায় বলা হয়েছে যে, যে লোকের বর্তমান অস্তিত্ব প্রশ্নাধীন, সে ৩০ বছরের মধ্যে জীবিত ছিল বলে যদি প্রমাণিত হয় এবং তার মৃত্যু কোন সাক্ষ্য পাওয়া না যায়, তবে আদালতকে ঐ লোকের জীবিত থাকার বিষয় প্রমাণিত বলে ধারণা করতে হবে।
কিন্তু যদি এরূপ কোন তথ্য পাওয়া যায় যা ঐ লোকের মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রকাশ করে, তবে আদালতকে এই অনুমান পরিত্যাগ করতে হবে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে প্রশ্নটি নির্ধারিত হবে।
সাক্ষ্য আইনের ১০৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন লোক সম্পর্কে ৭ বৎসর যাবৎ কোন খোঁজ-খবর জানা যায় নাই সেই লোকের জীবিত থাকার বিষয় প্রমাণ করার দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারার বক্তব্য হচ্ছে কোন লোককে ৭ বছর যাবৎ দেখা যায় নাই এবং সে মৃত বলে আইন মোতাবেক ধারণা করা হয়, সেই লোককে জীবিত বলে যদি কেউ দাবি করে তবে তাকেই উক্ত লোকের জীবিত থাকার বিষয় প্রমাণ করে হবে।
৭ বছরের শেষে বা নির্দিষ্ট তারিখে বা পরবর্তী কোন তারিখে মারা গিয়েছে এরূপ কোন অনুমান করা যায় না কিংবা ঐ লোক কোন বিশেষভাবে বা বিশেষ কারণে মারা গিয়েছে কিনা তদমর্মেও অনুমান করা যায় না। ৭ বছর যাবৎ নিখোঁজ লোককে মৃত বলে অনুমান করা যায় । কিন্তু মৃত্যুর কোন নির্দিষ্ট কারণ অনুমান করা যায় না। কখন মৃত্যু হয়েছে তা আদালতকে সিদ্ধান্ত করতে হবে।
কোন লোক জীবিত অথবা মৃত এই প্রশ্ন তোলার ৩০ বছর পূর্বে তাকে জীবিত দেখা গিয়েছে বলে গণ্য করার বিধান থাকায় তার নিকট হতে দূরবর্তী স্থানে অন্য কারও সাথে স্ত্রী বসবাস করায় স্ত্রী কর্তৃক ৭ বৎসরের মধ্যে ঐ লোকের খবর না পাওয়ায় তাকে মৃত বলে গণ্য করার আবেদন বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা নিখোঁজ হওয়ার ৭ বৎসরের মধ্যে যাদের পক্ষে খবর পাওয়া সম্ভব ছিল স্ত্রী তেমন কোন লোক নন। ৭ বছরের মধ্যে কোন লোকের খবর না পাওয়া গেলে তাকে মৃত বলে অনুমান করা যায়।
সাক্ষ্য আইনের ১০৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তিদের মধ্যে মালিক- প্রতিনিধি, জমিদার-প্রজা অংশীদারিত্বের প্রশ্ন ওঠে তাহলে যে ব্যক্তি এমন দাবী করবে প্রমাণের দায়িত্ব তার।
[12 DLR 698 Amiyo Bala Vs. Mofez Hal Sana] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “বাদী জমিদারের কর্মচারী কর্তৃক বিবাদীকে দাখিল প্রদান করা হয়েছে বলে বিবাদী ওজর নেওয়ায় তা বিবাদিকেই প্রমাণ করতে হবে যে, জমিদারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী বন্দোবস্তের দাখীলা দিয়েছিল বা জমিদার পরবর্তীকালে কর্মচারী এই কার্যকে স্বীকার করে নিয়েছিল।”
অত্র আইনের ১১০ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন জিনিস যার দখলে আছে তিনি তার মালিক কিনা এমন প্রশ্ন উঠলে যিনি দাবী করবেন দখলে থাকা জিনিসের মালিক দখলকারী নয় তা প্রমাণের দায়িত্ব তার।
১২ বছরের মধ্যে বাদী দখলে ছিল না এরূপ কোন ওজর সওয়ালে না থাকায় মোকদ্দমা রুজু করার ১২ ছরের মধ্যে বাদী দখলে ছিল এরূপ প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই। একবার অন্যের প্রাথমিক স্বত্ব আছে বলে প্রতিষ্ঠিত হলে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না এবং দখলকারিকেই প্রমাণ করতে হবে যে, ঐ স্বত্ব হস্তান্তর, উত্তরাধিকার বা বিরুদ্ধ দখল জনিত কারএ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।
দখল হতেই মালিকানার অনুমান করা হয়, যেক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ যার মালিক তা দখল করে থাকে। এরূপ কথা নাই যে, সাক্ষ্য আইনের ১১০ ধারার বিধান প্রয়োগের জন্য একচ্ছত্র মালিকানা দাবি করতে হবে, যিনি দখলে আছেন তিনিসহ শরিক বা সীমিত স্বত্বের দাবিদার হতে পারেন এবং দখল হতে তার স্বত্বের অনুমান করা যাবে।
[7 BCR 1087 (AD) 4 Rajon Miah Vs. Abdul Rashid] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “মামলা রুজু করার তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে বাদী দখলে ছিল এরূপ কিছু প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় কোন প্রতিকার পেতে পারে না।”
অত্র আইনের ১১১ ধারায় বর্ণিত নীতিকে “আদালতের মহান নীতি” বলা হয়ে। পরস্পর পক্ষগণের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে তাদের লেনদেনের ব্যাপারে সরল বিশ্বাস এর প্রশ্ন উঠলে যে পক্ষ আস্থার দ্বারা সম্পর্কিত প্রমাণের দায়িত্ব তাদের।
[20 DLR 9] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “ঋণদাতা (টাকা কর্জ দেয়ার ব্যাপারে) ঋণ গ্রহীতার উপর আধিপত্য খাটানোর পর্যায়ে ছিল কিন্তু কেবল তা নয় বরং প্রকৃতপক্ষে ঋণদাতা তা করেছে এরূপ অভিযোগ প্রমাণের ভার ঋণ গ্রহীতার উপর ন্যস্ত হবে। টাকার ঋণদাতা এবং ঋণ গ্রহীতার পর্যায়ে যারা থাকেন সাক্ষ্য আইনের নীতি তাদের বেলায় প্রযোজ্য হয় না।”
পরিশেষে বলা যায় যে, কোন মামলা বা প্রসিডিং প্রমাণের ভার সাধারণতঃ বাদীর উপর বর্তায়। তবে উক্ত মামলার অবস্থা বিশ্লেষণে কখনও কখনও প্রমাণের ভার বিবাদী বা আসামীর উপর ন্যস্ত হয়। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১০৩, ১০৫, ১০৬ ধারার বিধান মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাদী হতে বিবাদী বা আসামীর উপর প্রমাণের ভার ন্যস্ত হতে পারে।
লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট চট্টগ্রাম।
তথ্য কণিকা : সাক্ষ্য আইনের ভাষ্য- গাজী শামসুর রহমান, এডভোকেট নাসির উদ্দিন – আইন শব্দসমূহ, সাক্ষ্য আইন- বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২, উইকিপিডিয়া, সাক্ষ্য আইন- বাসুদেব গাংগুলি।