নাটোরে মামলা নিতে বিলম্ব করায় এবং মারামারির ঘটনার জখমীর মৃত্যুর পরেও হত্যার অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনে দাখিল না করার কারণ জানতে চেয়ে সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত।
সিংড়া আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু সাঈদ গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এই আদেশ দেন।
আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিংড়া আমলী আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সিংড়া থানার ওসি নুরে আলম এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলামকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার আদেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ গ্রামের রিপন আলী ও আজিজুলে মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলাকালে গত ২১ মে আজিজুল ইসলাম তার ছেলেদের নিয়ে রিপনের যায়গা দখল করতে যায়। এসময় বাঁধা দিতে গেলে রিপন আলীর উপর হামলা করে আজিজুল ইসলাম এবং তার ছেলেরা। এসময় রিপন আলীকে উদ্ধার করতে গেলে তার বাবা আব্দুল খালেকের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাথারী কুপিয়ে গুরুতর ঘখম করে আজিজুল ইসলাম এবং তার ছেলেরা।
পরে আব্দুল খালেককে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং ওই দিনই সিংড়া থানায় মামলা করেন আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন আলী। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা রুজু না করে আপোষ করে নিতে বলে তাদেরকে।
হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাসায় ফিলে যান আব্দুল খালেক ২৭ মে। এরপর আবারও অসুস্থ হলে ৫ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আব্দুল খালেককে ভর্তি করে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুন আব্দুল খালেক মারা যান।
মারা যাওয়ার খবরে তড়িঘড়ি করে সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা রুজু করেন। পরের দিন ৯ মে আব্দুল খালেকের দাফন করা হয় ময়নাতদন্ত ছাড়াই।
এরপর মামলাটি তদন্ত করে মারামারি ঘটনার কথা উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন দিলেও আব্দুল খালেকের মৃত্যু বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ হত্যার তদন্ত না করায় নিহতের স্ত্রী নিলুফা বেগম আদালতে অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সিংড়া থানায় মামলা রজু করতে বিলম্বের কারণ জানতে এবং ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক মারা যাওয়ার পরও কেন হত্যার বিষয়টি তদন্ত প্রতিবদনে উল্লেখ করেননি তা আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ নুরে আলম এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলামকে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের আদেশের বরাত দিয়ে মো. শহীদুজ্জামান বলেন, রিপন আলীর দায়ের করা মামলা কেন দেরিতে রুজু করা হলো এবং কেন আব্দুল খালেকের মৃত্যুর পরও তা অযোগপত্রে উল্লেখ নেই তার কারণ জানতে চেয়ে সিংড়া থানার ওসি নুরে আলম এবং পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলামকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে সশরীরে হাজির হতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সাথে রিপন আলীর দায়ের করা মামলা পুনরায় তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুবো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর নাটোরের বিশেষ পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছেন। রিপনের মা নিলুফা বেগমের দায়ের কার মামলাটি সিংড়া থানায় রজু করে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানাতে সিংড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই ঘটনায় দায়ের দুটি মামলার আসামী এবং অপরাধের ধারা ভিন্নতা থাকায় দুটি মামলায় পাশাপাশি (Simultaneously) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পিবিআই পুলিশ সুপারকে আদেশ দেন আদালত।