চলতি বছরেই চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ : তথ্যমন্ত্রী

চলতি বছরেই চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ : তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চলতি বছরেই চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা হবে। এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী ইতোমেধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

চট্টগ্রামস্থ নগরীর জি.ই.সি কনভেনশনে জাকজমক পূর্ণ পরিবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক-২০২২ অনুষ্ঠানে গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, জগদ্বিখ্যাত অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আইনজীবী ছিলেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইনজীবীরা সমাজের স্বাভাবিক নেতা। এ সময় তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মহাত্মা গান্ধী ও জহরলাল নেহেরুর উদাহরণ টানেন। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থী ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুও আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের আদালত প্রতিষ্ঠার পর থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ও আইনের শাসন অক্ষুন্ন রাখতে এ বারের সদস্যরা যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। উপমহাদেশের কয়েকটি সমৃদ্ধ বারের মধ্য এটি অন্যতম। সকল স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিসহ সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। যেখানে মানবাধিকার ভ’লন্ঠিত হয়েছে সেখানেই চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করে অধিকার আদায় করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা বার ঐতিহ্য ও বীরত্বের ইতিহাসে যুক্ত উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইনজীবীদের পেশাগত সম্মান যাতে অক্ষুন্ন না হয় সেজন্য বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনবো। জেলা প্রশাসনের সাথে সমিতির যে বৈরিতা তা অচিরেই কাটিয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

আইনজীবীদের চেম্বার সংকট নিরসনে তিনি সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কোর্ট হিলের আশেপাশে যদি কোন খালি জায়গা থাকে সেই জায়গায় নান্দনিক বহুতল ভবন তুলে এ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব। আমি একজন আইনজীবীর সন্তান, আইনজীবীদের প্রতি সব সময় আমার আবেগ, ভালবাসা নিবিড়ভাবে কাজ করে। আইনজীবীদের জায়গা সংকুলান দূরীকরণে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠানের সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পর পর তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এ.এইচ.এম. জিয়াউদ্দিন।

স্বাগত বক্তব্যে সমিতির সম্পাদক এ.এইচ.এম. জিয়াউদ্দিন বলেন, আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের সেবা করার জন্য আমরা কার্যনির্বাহী পরিষদ সর্বদা প্রস্তুত আছি। কোন প্রকার লোভ লালসা আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং বিচার প্রার্থী জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়ার সকল পরিবেশ তৈরী করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আমার বিশ্বাস আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে জেলা প্রশাসকের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবে। আইনজীবী সমিতি ও বিজ্ঞ সদস্যদের সুনাম, মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে সমিতির নতুন ভবন নির্মাণ হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নর্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদুর রহমান রিটু এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন সমিতির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক লায়লা নুর।

অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ.এম. আমিন উদ্দিন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরোও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির, চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমদ ভূঞা, মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা, চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল প্রমুখ।

অভিষেক অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিদায়ী সভাপতি মুহাম্মদ এনামুল হক, কার্যনির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ শফিক উল্লাহ্, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আজিজ উদ্দীন (হায়দার), অর্থ সম্পাদক এম. সালাহ্উদ্দিন মনসুর চৌধুরী (রিমু), পাঠাগার সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক লায়লা নুর, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন (দোয়েল), নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে মো. তৌহিদুল বারী চৌধুরী, এ.এন.এম. রোকনুজ্জামান (মুন্না), মো. খোরশেদ আলম, মো. মোস্তফা করিম, তৌহিদুল ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ-আল-মামুন, বিলকিস আরা (মিতু), আইনুল কামাল, শ্যামল চৌধুরী, সেলিনা আক্তারসহ বিদায়ী পরিষদের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ এবং সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দসহ চট্টগ্রামের আদালতসমূহের বিচারকবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি নির্বাচিত পরিষদকে পুস্পস্তবক দিয়ে অভিষিক্ত করেন এবং বিদায়ী পরিষদকে নব-নির্বাচিত পরিষদের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথিকে সমিতির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্বরূপ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে দেশের খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী লিজা ও কিশোর দাশ এর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।