মোঃ করমুল্লাহ : একটা উদাহরণ দিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। ধরুন, কোন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করলে, যে ব্যক্তিকে গুলি করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি উক্ত গুলিতে আহত হয় এবং উক্ত আসামি আহত ব্যক্তির পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলটা নিয়ে যায় তাহলে অপরাধীর শাস্তি কি?
উক্ত অপরাধের জন্য দুটি মামলা দায়ের করা যায়।
প্রথমত : হত্যার উদ্দেশ্য গুলি করা দন্ডবিধির ৩০৭ ধারা ও উক্ত গুলিতে আহত হওয়া দন্ডবিধির ৩২৬ ধারায় এবং পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে যাওয়ায় দন্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় মামলা হবে।
দ্বিতীয়ত : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি উক্ত অস্ত্র অপরাধীর দখল হতে উদ্ধার করতে পারেন তাহলে অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এর ১৯ক/১৯(চ) ধারা মোতাবেক আরেকটি মামলা হবে।
প্রথম মামলার শাস্তি
এক্ষেত্রে গুলিতে আহত হওয়ার জন্য দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারা মোতাবেক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে গুলি করার জন্য দন্ডবিধির ৩০৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদণ্ড। পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয় দন্ডবিধির ৩৭৯ ধারা মোতাবেক ৩ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিচারিক আদালত ও এখতিয়ার
উপরোক্ত অপরাধগুলোর বিচার করতে পারবেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু তাঁরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারা মোতাবেক সাধারণ এখতিয়ারে ৫ বছরের উর্ধ্বে দণ্ড প্রদান করতে পারেন না।
বিশেষ ক্ষমতা বলে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯(গ)+৩৩ক ধারা মোতাবেক ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারেন। আবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (১) ধারা মোতাবেক এক সঙ্গে চলবে বলে নির্দেশ না দিলে তখন আদালতের নির্দেশ মোতাবেক একটির পর একটি চলবে।
কিন্তু এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(২)(খ) ধারা মোতাবেক দন্ডবিধির ৩২৬ এবং ৩৭৯ ধারার অপরাধের শাস্তি একত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছরের বেশি প্রদান করতে পারবেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আসামি যে ক্ষেত্রে মারাত্মক জখম এমন পরিস্থিতিতে করে যে, তার অপরাধ ৩০৭ এবং ৩২৬ ধারার আওতায় পড়ে সেক্ষেত্রে তাকে দুটি ধারার যেকোন একটিতে শাস্তি দেওয়া যাবে। যে ক্ষেত্রে বাদী পক্ষের সাক্ষ্য বাদী পক্ষকে শুধুমাত্র আক্রমণ করতে আসামি প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে ঘটনা প্রকাশ করে সে ক্ষেত্রে আসামিকে দন্ডবিধির ৩০৭ ধারায় শাস্তি দেওয়া যায় না।
রেফারেন্স
[PLD 1960 (Lah.) 97]
অর্থাৎ কোনো আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৭ এবং ৩২৬ উভয় ধারায় চার্জ গঠন করা হলেও শাস্তি দেওয়া যাবে যে কোন একটি ধারায়। যে ক্ষেত্রে বিচারকারী ম্যাজিস্ট্রেটের মনে হয় আসামিকে আরো বেশি শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন তখন উক্ত মামলার ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৭ ধারা মোতাবেক দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দিবেন।
দ্বিতীয় মামলার শাস্তি
অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এর ১৯ক ধারায় অবৈধ অস্ত্র দখলে রাখার জন্য এবং ১৯(চ) ধারায় অবৈধ কার্তুজ দখলে রাখার জন্য। অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিন্তু ১০ বছরের কম হবে না। এক্ষেত্রে অর্থদণ্ড দেওয়ার সুযোগ নাই।
বিচারিক আদালত
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৬ ধারা মোতাবেক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার্য।
লেখক : মোঃ করমুল্লাহ; অ্যাডভোকেট, চট্টগ্রাম জজ আদালত।