অপরাধের গভীরতা বিবেচনা না করেই শুধুমাত্র বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দণ্ডিত অপরাধীকে জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
‘দুদক বনাম মো. কুতুব উদ্দিন আহমেদ’ মামলার রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, দণ্ডিত আসামির জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে শুধু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নাই।
শ্বশুরসহ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির মামলায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। ওই আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১৪ জুলাই হাইকোর্ট আসামিকে ৬ মাসের জামিন দেয়। এই জামিন বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের জামিন বাতিল করে দেয় আপিল বিভাগ।
জামিন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছে, জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। যখন অপরাধ জামিনযোগ্য হয় তখন বিচারাধীন আসামির জামিন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হলে অসুস্থ ও জরাগ্রস্ত বন্দি, নারী ও শিশুর জামিন বিবেচনা করার সুযোগ আদালতের রয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারাধীন বা দণ্ডিত আসামির জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন, একসঙ্গে মেলানোর সুযোগ নাই।
আপিল বিভাগ বলেছে, কোন মামলায় জামিন দেওয়া বা না দেওয়া হাইকোর্টের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। কিন্তু যখন কোন মামলায় যুক্তির বাইরে গিয়ে হাইকোর্ট জামিনের সিদ্ধান্ত দেয় তখনই আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করে। বর্তমান মামলায় আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত থাকার পরেও শুনানি না করে আসামিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছে। যা ন্যায় সঙ্গত হয়নি।
রায়ে আরো বলা হয়, হাইকোর্টের উচিত ছিল, যেহেতু আসামির আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত সেহেতু দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কিন্তু সেটা না করে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জামিন দিয়েছে। এ কারণে আমরা মনে করি হাইকোর্টের জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট। সেজন্য ওই জামিন আদেশ বাতিল করা হলো।