মতিউর রহমান : সৈয়দপুর থেকে বাসে চড়ে নীলফামারী যাচ্ছি। শুক্রবার। পায়জামা পাঞ্জাবি আর টুপি পড়েছি। বাস ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পৌঁছেছি টার্মিনালে। ইতিমধ্যেই বাসের সব সিট ভর্তি হয়ে গেছে। লোকাল বাস।
অভ্যাস মত বাসের দরজায় পা দিয়েই সব যাত্রীদের উদ্দেশ্যে সালাম দেই। ….আসসালামু আলাইকুম।
যাত্রীরা আমার সালাম শুনতে পেয়েছে কিনা জানিনা তবে বাসের ড্রাইভার যে শুনতে পেয়েছে তা একটু পরেই টের পেলাম।
ছাদে ঝুলানো স্টিলের লম্বা পাইপ ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ শুনি একগাল পান চিবাতে চিবাতে ড্রাইভার তার কন্টাকটারকে বলছে ” এই কন্ট্রাকটর হুজুরের কাছে ভাড়া নিস না” …..
একটু পরে ভাড়া আদায় শুরু হল। কন্টাকটার আমার কাছে আসা মাত্র পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেছি টাকা দেওয়ার জন্য।
~ ড্রাইভার আপনার কাছে ভাড়া নিতে নিষেধ করেছে,
~ কেন?
~ আমরা হুজুরদের কাছে ভাড়া নেই না। আপনি হুজুর মানুষ আমাদের জন্য শুধু দোয়া কইরেন যাতে বাসটা ঠিকঠাক মত পৌঁছাতে পারে।
আমি আশেপাশে চোরের মত ভালো করে তাকিয়ে দেখি। কন্টাকটার আর আমার এই কথোপকথন কেউ শুনতে পায় নাই!
প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি কন্টাকটারের হাতে ভাড়া গুঁজে দেওয়ার জন্য। কিছুতেই ভাড়া নেবেন না তিনি। আমাকে যে হুজুর মনে করেছেন আমি সেই হুজুর নই এটা বারবার বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছে, নিজের পরিচয় দিতে পারি না।
কানে কানে বলি, ভাই আমি চাকরি করি মোটামুটি একটা বেতন পাই, দয়া করে ভাড়াটা নিলে খুশি হব।
~ আরে রাখেন হুজুর মানুষ কয় টাকা বেতন পান সেটা আমার জানা আছে- বলেই আমার গুঁজে দেওয়া টাকা আবার জোর করে ফেরত দেয় সে।
শেষ পর্যন্ত আর ভাড়া দিতে পারলাম না।
নামার পর অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকি ধীরে ধীরে চলে যাওয়া অপশ্রীয়মান বাসটার দিকে।
কানে বাঁজতে থাকে বাস ড্রাইভারের সেই আদেশসূচক কন্ঠ “এই কন্টাকটার হুজুরের কাছে ভাড়া নিস না” ….
লেখক : অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পঞ্চগড়।