চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলায় কিসের বিনিময়ে (consideration) বাদী চেক প্রাপ্ত হয়েছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিবরণ আর্জিতে উল্লেখ না থাকলে বিচারিক আদালত মামলাটি আমলে না নিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চেকের মামলার বিচারে আসামীর দায় প্রমাণের ক্ষেত্রে দেওয়ানি মোকদ্দমার ম্যান্ডেটের মতোই “standard of burden of proof” বিবেচনায় রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন উচ্চ আদালত।
‘হাজী দেলোয়ার হোসেন বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার (২৩ অক্টোবর) এই রায় ঘোষণা করেন তিনি।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, দেওয়ানি প্রকৃতির মামলায় সবকিছু প্রমাণের দায়িত্ব থাকে বাদীর। সেই কারণে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা যথানিয়মে অভিযোগকারীকেই তার অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ করতে হবে আদালতে। মামলার আর্জিতে যদি চেক বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা না থাকে তাহলে বিচারিক আদালত সেই আর্জি গ্রহণ করবে না।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় আর.এফ প্রোর্টিজের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন ও কামরুল হাসান বাচ্চুকে আসামি করে মামলা করেন চেক গ্রহীতা মো. আমিনুল্লাহ। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন।
বাদী মামলায় অভিযোগ করেন যে, আসামিরা পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল এক কোটি টাকার একটি চেক দেন। চেকটি নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করলে ওই বছরের ২৫ জুন তা প্রত্যাখ্যান হয়।
ওই বছরের ১৪ জুলাই ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। পরে টাকা পরিশোধ না করায় ২৫ আগস্ট মামলা করা হয়। এই মামলায় ২০১৭ সালের ২১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
পরবর্তীতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষে ২০২০ সালের পহেলা মার্চ দুই আসামিকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমাণ কোটি টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন আসামিরা। আপিলের রায়ে ওই আদালত বলেন, মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। আইনত রক্ষণীয় নয়। এ কারণে মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান।
এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। রিভিশন মামলার রায়ে হাইকোর্ট বাদীর অভিযোগনামা প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি আসামিদের খালাস প্রদান করেছেন।
সেই সাজার রায় বাতিল করে হাইকোর্ট বলেছে, মামলার নথি থেকে চেকটি দেখলাম। চেকের লেখাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কালিতে। যা খালি চোখে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। যা জাল চেক মর্মে প্রমাণ হয়। এটিকে সৃজিত চেক বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, শ্রম প্রদান ও ব্যবসায়িক কারণে চেকগ্রহীতাকে আসামিরা চেক দিয়েছেন। কিন্তু কিসের শ্রম ও ব্যবসায়িক কারণে চেক দেওয়া হয়েছে সেটা স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয় নাই। এছাড়া এর স্বপক্ষে কি সাক্ষ্যপ্রমাণ বাদী আদালতে দাখিল করেছেন সেটার কোন তথ্য নাই। এ কারণে চেক গ্রহীতা কিসের বিনিময়ে কিভাবে চেকটি পেয়েছেন সেটা সুনির্দিষ্টভাবে মামলার আর্জিতে উল্লেখ না থাকে তাহলে বিচারিক আদালত মামলাটি আমলে না নিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন।
আদালতে হাজী দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন, হাজী দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চেক গ্রহীতা। কোনভাবে একটি চেক পেয়ে উনি তাতে ঘষামাজা করে কোটি টাকা দাবি করে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে আজ প্রমাণিত হলো চেকটি জাল ছিল।